ঘূর্ণিঝড় মোখা (সম্ভব্য) অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার আশংকা করা যাচ্ছে।

গতকাল আপনাদের জানিয়েছিলাম যে আরও বেশি নিশ্চিত না হয়ে ঘূর্ণিঝড় মোখা (সম্ভব্য) এর সর্বোচ্চ শক্তি সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করতে চাই না। আজ সারাদিন আমি বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন অংশের সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, ২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানির গভীরতা, উ-লম্ব বায়ু শিয়ারের মান, ভারত উপমহাদেশের উপর জেটষ্ট্রিমের অবস্থা ও চলার গতির তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে। এর পরে সেই বিশ্লেষণের সাথে বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস এর সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছি। উপরোক্ত তথ্য ও আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাসের আলোকে আমি আশংকা করছি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা আগামী রবিবার (১৪ ই মে) সকাল ৬ টার পর থেকে ১৫ ই মে সকাল ৬ টার মধ্যে অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মায়ানমারে রাখাই রাজ্যের মং-ডু জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করবে। 

ছবি বর্ণনা: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় মোখার ৫১ টি সম্ভব্য যাত্রাপথ ও বাতাসের গতিবেগের চিত্র। এই চিতটিকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) বলা হয়। 

স্থল ভাগে আঘাতের স্থানটি নিয়ে এখনও সামান্য পরিমাণ অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে যার কারণে ঘূর্ণিঝড়টি মায়ানমারের দিকে কিংবা বরিশাল বিভাগের দিকে সামান্য পরিমাণ ঝুঁকে পড়তে পারে। অর্থাৎ, ঘূর্ণিঝড়টির চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার কিছু সম্ভাবনা রয়েছে। একি ভাবে ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা ডান দিকে সরে গিয়ে কক্সবাজার ও মায়ানমারে রাখাই রাজ্যের মং-ডু জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার কিছু সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশ্ন: সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা স্থল ভাগে আঘাতের সময় উপরে উল্লেখিত বাতাসের গতিবেগ সম্বন্ধে আমি আত্মবিশ্বাসী কি না?

উত্তর: ঘূর্ণিঝড় মোখা (সম্ভব্য) যে অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে ঘণ্টায় প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে পূর্ব বঙ্গোপসাগর উপকূলে আঘাত করতে যাচ্ছে এই বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত Ensemble (সংকলন/সমষ্টিগত) আবহাওয়া পূর্বাভাসের উপর আমি পূর্ণ আস্থা রাখছি। এই ঘূর্ণিঝড়টি যে খুবই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হবে সেই আশংকার কথা আমি ২৬ শে এপ্রিল থেকে প্রচারিত প্রত্যেকটি আপডেট এর মাধ্যমে বারংবার মনে করিয়ে দিয়েছি।

প্রশ্ন: সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে কত ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে?

উপরে উল্লেখিত গতিবেগে ঘূর্ণিঝড় মোখা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় এই দুই জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলো ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো ৫ থেকে ৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

প্রশ্ন: সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের কোন এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে?

আমি আশংকা করছি যে ঘূর্ণিঝড় মোখা এর কেন্দ্র কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টি দ্বীপ, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, ও মহেশখালী উপজেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার। ঘূর্ণিঝড় মোখা (সম্ভব্য) টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর উপর দিয়ে অতিক্রম করার আশংকা প্রবল।

প্রশ্ন: সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের কোন বিভাগে কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হতে পারে?

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার, বরিশাল বিভাগ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর উপর ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার আশংকা করছি।

খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার; ঢাকা ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টির হওয়ার আশংকা করছি। 

 

আগ্রহী পাঠক যদি এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চান তবে নিচে সংযুক্ত নিবন্ধটি পড়ার আমন্ত্রন জানাবো।

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা (পর্ব ২৪): Ensemble (সংকলন/সমষ্টিগত) আবহাওয়া পূর্বাভাস কি? 

 

 

*****************************************************************

******** সংবিধি বধ্য সতর্কীকরণ********

*****************************************************************

এই ওয়েবসাই থেকে সংগৃহীত তথ্য সূত্র উল্লেখ না করে প্রকাশ করা সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। তবে যথাযথ ভাবে নিম্নোক্ত সূত্র উল্লেখ পূর্বক প্রকাশে কোন বাধা নেই।

মোস্তফা কামাল পলাশ,
আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক,
সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা

 

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles