সমরেশ মজুমদার রচিত ত্রয়ী উপন্যাসের (উত্তরাধিকার > কালবেলা > কালপুরুষ) আলোকে কালবৈশাখী ঝড়ের জীবনচক্র ব্যাখ্যা

আমার সবচেয়ে প্রিয় ৩ জন সাহিত্যিক এর মধ্যে একজন হলো সদ্য প্রয়াত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। আমার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দিনগুলিতে যে সাহিত্যিকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে বেড়ে ওঠায়, নিঃসন্দেহে সমরেশ মজুমদার তাদের মধ্যে প্রধানতম। আজ ২৩ শে মে থেকে শুরু করে আগামী ৩ দিন বংলাদেশের উপর দিয়ে শক্তিশালি কলাবৈশাখি ঝড় অতিক্রম করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে, আজ প্রয়াত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার রচিত ত্রয়ী উপন্যাসের (উত্তরাধিকার > কালবেলা > কালপুরুষ) আলোকে কালবৈশাখী ঝড়ের জীবনচক্র ব্যাখ্যার চেষ্টা করলাম তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরুপ।

অনেকে প্রশ্ন করে থাকে আমি কিভাবে রাডার থেকে প্রাপ্ত চিত্র দেখে কালবৈশাখী ঝড় সম্বন্ধে পূর্বাভাষ করি? আজকের লেখাটা মূলত তাদের লক্ষ করেই লেখা।  

উপরের ছবিটি লক্ষ করুন। এই ছবিতে ৩ টি চিত্র রয়েছে। আপনি যদি সাহিত্য প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা হয়ে থাকেন তবে মনে করতে পারেন এই ৩ টি ছবি হলও সাহিত্যিক সমরশ মজুমদারের উত্তরাধিকার (শুরু মেঘটি) > কালবেলা (মধ্যের মেঘটি) > কালপুরুষ (ডান দিকের মেঘটি)।

উত্তরাধিকার উপন্যাসটিতে সমরেশ মজুমদার যেমন করে তার সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র অনিমেষের বাল্যকাল থেকে কৈশোর হয়ে তারুণ্যে পা দেওয়ার সম্পূর্ণ সময়কে তুলে ধরেছে অত্যন্ত নিপুণভাবে এই একি ভাবে কালবৈশাখী ঝড়ের শৈশব, কৈশোরের নিরীহ, গোবেচারা অবস্থা দেখা যায় মেঘের আই অবস্থায়। কৈশোরের নিরীহ অনিমেষ যে যৌবন বয়সে পদার্পণ করে বিদ্রোহী হয়ে উঠবে তা যেমন অনেক পাঠকই বুঝতে পারে না; ঠিক তেমনি ভাবে মেঘের প্রাথমিক অবস্থা দেখে কেউ বুঝতে পারে না এই মাঘটি তীব্র বজ্রপাতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এর ঝলকানি ও কানা ফাটা আওয়াজ এর মাধ্যমে নিজের বিদ্রোহ ঘোষণা করবে।

“কালবেলা” মানে অশুভ সময়. “কালবেলা” আসলেই একটি অশুভ সময়ের চিত্র উপস্থাপন করেছে উপন্যাসটিতে ঠিক তেমনি মধ্যের মেঘটি মানুষের জন্য অশুভ ও প্রাণঘাতী। এই মেঘ থেকেই প্রায় ৮৫% বজ্রপাত সৃষ্টি হয় ও মানুষ মারা যায়। উত্তরাধিকার উপন্যাসটি পড়ার পুরোটা সময় পাঠক উৎকণ্ঠায় থাকত যে পরের পেজে কি আছে? পরের পেজটা না পড়লে জরুরি প্রয়োজনে ও বই ছেড়ে উঠা যাবে না। কালবেলা উপন্যাসটা পড়ার সময় যুদ্ধাবস্থা চালু থাকে, ঠিক তেমনি মধ্যের মেঘটি মানুষকে ভীতসতস্ত্র করে রাখে পুরোটা সময়। 

কালপুরুষ উপন্যাস পড়তে এসে পাঠকের ঐ পরিমাণ আগ্রহ অবশিষ্ট থাকে না যেমনটি ছিলও প্রথম দুইটি উপন্যাস পড়ার সময়। তৃতীয় মেঘের ক্ষেত্রেও ঠিক একই অবস্থা হয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে তখন আর কালবৈশাখী ঝড়ের শুরু কিংবা মধ্যবর্তী অবস্থার উৎকণ্ঠা আর অবশিষ্ট থাকে না।

প্রথম ছবি (বাম দিক থেকে): কালবৈশাখী ঝড় এর কিশোর/কিশোরী অবস্থা

বাম দিক থেকে প্রথম চিত্রটি হলও কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থা বা কালবৈশাখী ঝড় এর কিশোর/কিশোরী অবস্থা। সবেমাত্র মেঘের সৃষ্টি শুরু হয়েছে। এই মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়া শুরু হয় না কিন্তু মেঘের মধ্যে যে বৃষ্টিকনা সৃষ্টি হয় তা রাডার থেকে প্রাপ্ত চিত্রে ধরা পরে। রাডারে সবেমাত্র কিছুটা সবুজ আভা দেখা যায়। যে আভা আশ-পাশের সবুজ অংশ থেকে ভিন্ন। এই ধরনের সবুজ আভা কোন স্থানে কাল বৈশাখী ঝড় পুরোপুরি সৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হওয়ার ২ থাকে ৬ ঘণ্টা পূর্বে শুরু হয়। সাধারণত প্রতিদিন সকালে বাংলাদেশের কোন জেলার আকাশে এই অবস্থা দেখে আমি প্রাথমিক অনুমান করি যে এই জেলা বা উপজেলায় আজ দিনের কোন এক সময় কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টি হতে পারে। ছোট বেলায় অনেক কিশোর/কিশোরী অনেক শান্ত সুবোধ থাকলেও বড় হয়ে কেউ কেউ দেশের শীর্ষ সন্তাসী হয়ে যায়। যাদের অনেকের সন্তাস নিজ জেলা থেকে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক একই ভাবে কোন কোন কালবৈশাখী ঝড় প্রচণ্ড ভয়ংকর রূপ ধারণ করে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ধ্বংস চালিয়ে যায়।

দ্বিতীয় (মধ্যম) ছবি: শিল্পী মমতাজের যৌবন আমার লাল টমেটো গানের কথায় বলতে হয় কালবৈশাখী ঝড়ের যৌবন অবস্থা:

এর পর মধ্যের ছবিটি লক্ষ করুন: প্রথম ছবির মেঘটির উচ্চটা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে ও এক সময় সেই মাঘের উচ্চতা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এই প্রকারের মেঘ থেকে শিলাবৃষ্টি সৃষ্টি হয়। থেকে মেঘের এই পর্যায়েই বজ্রপাতের শুরু হয় প্রায় ৮০% বজ্রপাতই মেঘের এই অবস্থায় সৃষ্টি হয়। কোন কোন বজ্রপাত মেঘের গোঁড়া বা নিচের অংশ থেকে ভূমিতে নেমে আসে (মেঘ থেকে ভূমিতে); কিংবা ভূমি থেকে বজ্রপাত মেঘের গোঁড়ায় প্রবাহিত হতে পারে (ভূমি থেকে মেঘে); কোন কোন বজ্রপাত মেঘের মধ্যেই নিচ থেকে উপরে কিংবা উপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় (মেঘের মধ্যস্থ বজ্রপাত); কোন কোন বজ্রপাত এক মেঘ থেকে পাশের মেঘে (মেঘ থেকে মেঘে) কোন কোন বজ্রপাত মেঘের শীর্ষ থেকে সরাসরি মাটিতে নেমে আসে (এই বজ্রপাতটা হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ংকর ও সবচেয়ে শক্তিশালী; এই বজ্রপাত যখন হয় তখনই সবচেয়ে বেশি শব্দ শুনা যায়, এই ধরনের বজ্রপাতের শক্তি ২ থেকে ৪ লক্ষ ভোল্ট পর্যন্ত হতে পারে)। এই ধরনের বজ্রপাত মেঘ যে স্থানে আছে সেই স্থান থেকে ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। সোজায় কথায়, মেঘটি ঢাকায় অবস্থান করলেও এই মেঘ থেকে সৃষ্ট বজ্রপাত কুমিল্লায় গিয়ে পড়তে পারে।

তৃতীয় ছবি: কালবৈশাখী ঝড় এর বৃদ্ধ অবস্থা কিংবা মুম্বাই কিংবা ঢাকাই ছবি একালের প্রবল প্রতাপশালী নায়ক বৃদ্ধ বয়সে নায়কের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করে

এই মেঘটি হলও কালবৈশাখী ঝড় এর ক্ষয়ে যাওয়া অবস্থা। মেঘের এই অবস্থায় গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি পড়তে থাকে অনেকক্ষণ ধরে। আব হাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের বৃষ্টিপাতকে বলা হয় Stratiform Precipitation। এই ধরনের বৃষ্টিপাতের সময় রাডার থেকে প্রাপ্ত চিত্রে সাধারণ সবুজ ও হলুদ রঙ এর আধিক্য দেখা যায়। লাল রং এর পরিমাণ খুবই সামান্য থাকলেও থাকতে পারে। মেঘের এই অবস্থায় মাত্র ১০ থেকে ১৫ % বজ্রপাত হয়। মেঘে মধ্যবর্তী অংশটা যখন গাড় লাল থাকে তখন মেঘ থেকে ভারি বৃষ্টি পাত হয়। মেঘের গাড় লাল অংশের মধ্যে যখন কিছু অংশ পিংক কিংবা ভায়োলেট রং এর থাকে তখন সেই স্থান থেকে শিলাবৃষ্টি পড়ে। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: সাহিত্য প্রেমিক ভাই, বোন ও বন্ধুরা যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন কালবৈশাখী ঝড়ের ৩ টি অবস্থা ব্যাখ্যা করতে প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের কালজয়ী উপন্যাস ত্রয়ী উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষের উদাহরণ টানায় তবে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। 

 

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles