আজ মঙ্গলবার রাত ১২ টা থেকে ভোর  ৬ টামধ্যে উপকূল অতিক্রম করা শুরু করতে পারে ঘূর্ণিঝড় হামুন

(আপডেট: ৮, অক্টোবর ২, ২০২৩)

আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার হতে প্রাপ্ত ৫ নম্বর ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তা অনুসারে বুধবার দুপুর না; আজ মঙ্গলবার রাত ১২ টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় হামুন এর কেন্দ্র দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার (বিশেষ করে কুতুবদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপ) উপর দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। 

ছবি: ঘুর্নিঝড় হামুন এর সাম্ভব্য যাত্রাপথ। (ছবি সুত্র: আমেরিকার নৌবাহিনী কতৃপ পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার)

দুপুর ১২ টার সময় প্রাপ্ত ৫ নম্বর সতর্ক বিজ্ঞপ্তির অনুসারে ঘূর্ণিঝড় হামুন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসাবে ঘন্টায় প্রায় ১৪৮ কিলোমিটার গড় গতিবেগে (দমকা হাওয়া সহ ঘন্টায় ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল) দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করেছে আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার।

উপকূলে আঘাত করার সময় ঘূর্ণিঝড় হামুন এর বাতাসের গতিবেগ যদি ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটারের বেশি থাকে তবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে।

ছবি বর্ণনা: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় হামুন এর ৫১ টি সম্ভব্য যাত্রাপথ ও বাতাসের গতিবেগের চিত্র। এই চিতটিকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) বলা হয়। 

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেলের (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ সমন্বিত পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় হামুন এর কেন্দ্র নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপরে দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা বেশি। ঐ দিকে আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগে প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি।

ঘূর্ণিঝড় হামুনের ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশংকা করা যাচ্ছে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের সকল উপকূলীয় জেলাগুলোর উপরে। জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, ও কক্সবাজার জেলার উপরে। ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

সোমবার দুপুর ১২ টার সময় ঘুর্নুঝড় হামুন যে শক্তিতে উপকূলে আঘাত করবে বলে সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল, ভারতীয় ও আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা অনুমান করেছিল মাত্র ১৮ ঘন্টার ব্যবধানে আজ সকাল ৯ টার সময় ঘূর্ণিঝড় হামুনের উপকূলে আঘাতে সময় সম্ভব্য শক্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৪ ঘন্টা পূর্বে পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় মাত্র ৫০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার দুপুরের পূর্বাভাস অনুসারে উপকূলে আঘাত করার সময় ঘূর্ণিঝড় হামুনের বাতাসের গড় গতিবেগ ঘন্টায় ১৩০ কিলোমিটার ও দমকা হাওয়া সহ ১৫৭ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠার সম্ভাবনা নির্দেশ করা হয়েছে। এই গতিতে ঘূর্ণিঝড় হামুন উপকূল অতিক্রম করলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চয়ে ৭ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে।


এখন সময় মঙ্গলবার বিকেল ৪ টা। হাতে সময় আছে ৮ ঘন্টার; ভোলা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার দারিদ্র মানুষদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা গুলোকে। ঘূর্ণিঝড় হামুন এই দ্রুত সময়ের মধ্যে এত বেশি পরিমাণে শক্তিশালি হয়েছে ও হচ্ছে যা আবহাওয়া-বিদের অনুমানের বাহিরে ছিলও। ঘূর্ণিঝড় মোখা এর পূর্বে গণমাধ্যম যে রকম সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল সংবাদ প্রচারে শুধুমাত্র আজ মঙ্গলবারের দিনটাও যদি বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো ঘূর্ণিঝড় হামুন সম্বন্ধে একই ভূমিকা পালন করে তবে ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে সম্ভব্য ক্ষয়-ক্ষতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলোর হতে প্রাপ্ত আজ ২৩ শে অক্টোবরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে:

আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলোর হতে প্রাপ্ত আজ ২৪ শে অক্টোবরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে:

বাংলাদেশের উপকূলে আঘাতের সম্ভাব্য সময়: ২৪ শে অক্টোবর রাত ১২ টার পর থেকে ২৫ শে অক্টোবর ভোর ৬ টার মধ্যে।

বাতাসের সম্ভব্য গড় গতিবেগ: ঘন্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার
বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ (দমকা হাওয়া): ঘন্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার

জলোচ্ছ্বাসের সম্ভব্য উচ্চতা (জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করলে): স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ থেকে ১০ ফুট বেশি
জলোচ্ছ্বাসের সম্ভব্য উচ্চতা (ভাটার সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করলে): স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি

বৃষ্টিপাতের সম্ভব্য পরিমাণ (২৩ থেকে ২৭ শে অক্টোবর পর্যন্ত):

১) বরিশাল বিভাগ: ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার

২) খুলনা বিভাগ: ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার

৩) চট্টগ্রাম বিভাগে: ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার

৪) ঢাকা বিভাগ: ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার

৫) সিলেট ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার;

৬) ময়মনিসংহ ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার;
৭) রাজশাহী বিভাগ: ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার।

৮) রংপুর বিভাগ: ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার

সর্বোচ্চ পরিমাণের বৃষ্টিপাতের ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগ ও জেলাসমূহ:

১) বরিশাল বিভাগ: বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল,
২) খুলনা বিভাগ: সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর,
৩) চট্টগ্রাম বিভাগ: ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষমণবাড়িয়া
৪) ঢাকা বিভাগ: শরিয়তপুর, মুন্সিগন্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী
৫) সিলেট বিভাগ: মৌলভীবাজার, সিলেট
৬) ময়মনসিংহ বিভাগ: নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ
৭) রাজশাহী বিভাগ: পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ
৮) রংপুর: গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম

ছবি: কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের শীর্ষের তাপমাত্রা। যে স্থানে তাপমাত্রা যত বেশি ঋনাত্নক সেই স্থানে মেঘের উচ্চতা তত বেশি ও সেই স্থানে মেঘের মধ্যে বৃষ্টির পানির পরিমাণ তত বেশি। 

ছবি: কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের শীর্ষের তাপমাত্রা। যে স্থানে তাপমাত্রা যত বেশি ঋনাত্নক সেই স্থানে মেঘের উচ্চতা তত বেশি ও সেই স্থানে মেঘের মধ্যে বৃষ্টির পানির পরিমাণ তত বেশি। 

ছবি: কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের শীর্ষের তাপমাত্রা। যে স্থানে তাপমাত্রা যত বেশি ঋনাত্নক সেই স্থানে মেঘের উচ্চতা তত বেশি ও সেই স্থানে মেঘের মধ্যে বৃষ্টির পানির পরিমাণ তত বেশি। 

ছবি: কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের শীর্ষের তাপমাত্রা। যে স্থানে তাপমাত্রা যত বেশি ঋনাত্নক সেই স্থানে মেঘের উচ্চতা তত বেশি ও সেই স্থানে মেঘের মধ্যে বৃষ্টির পানির পরিমাণ তত বেশি। 

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles