বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস: আপডেট ৫ (বৃহঃপতিবার ১৬ ই মে, ২০২৪)

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানিয়েছিলাম যে মে মাসের ২০ তারিখ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বের প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো কিছুটা ব্যতিক্রমী পূর্বাভাস দিচ্ছে। প্রধান ২ টি আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল যে পূর্বাভাস দিচ্ছে সেই পূর্বাভাসে অনেক বেশি অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি, স্থলভাগে আঘাতের স্থান নিয়ে। প্রধান ২ টি আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের একটি অন্যটির সাথে এক মত হচ্ছিল না। দুইটি মডেলের পূর্বাভাসের মধ্যে অনেক বেশি পার্থক্য দেখা যাচ্ছিল। বিশ্বের প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাসে প্রায় সকল মডেলই দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে আগামী ২২ শে মে থেকে ২৪ শে মে এর মধ্যে। লঘুচাপটির সৃষ্টির সাম্ভ্য স্থান হলও আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে কিংবা সরাসরি পশ্চিম অংশের উপরে। যেহেতু আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, ও যুক্তরাজ্যের আব হাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করতেছে লঘু চাপ সৃষ্টির বিষয়ে তাই মোটামুটি নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার প্রবল আশংকা রয়েছে আগামী ২২ শে মে থেকে ২৫ শে মে এর মধ্যে। 

ছবি: আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল অনুসারে ২৫ শে মে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকুলে লঘুচাপ হিসাবে আঘাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে (১৬ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)।  

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল অনুসারে মে মাসের ২৩ তারিখে ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বিপের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের গভীর সমুদ্রের উপরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। (১৬ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)। 

এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করে আসলেও এই সপ্তাহে এই মডেলটি একদিন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনার পূর্বাভাস দিলে ও পরের দিন একটি লঘু চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। পক্ষান্তরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল শুরুতে একটি লঘু চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করলেও গতকাল রবিবার থেকে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া শুরু করেছে। প্রকৃত পক্ষে যদি ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে রিমাল। এই নামটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের দেওয়া।

সম্ভব্য লঘু চাপটি ২২ থেকে ২৪ মে এর মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ও ২৫ শে মে গভীর নিম্নচাপ ও ২৬ থেকে ২৭ এর মে এর মধ্যে পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি মাসের ২৬ তারিখ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকূল থেকে শুরু করে মায়ানমারের রাখাই রাজ্যের মধ্যবর্তী যে কোন এলাকার উপকূলের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি কেম শক্তিশালি হবে ও কোন উপকূলে আঘাত করবে তা অনেকাংশে নির্ভর করবে মে মাসের ২০ তারিখের পরে ভারতীয় উপমহাদেশের উপরে জেট স্ট্রিমের অবস্থানের উপরে।

ছবি: আজ ১৬ ই মে আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল এর পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আঘাত করার সম্ভবানা রয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল একই সাথে সমুদ্রের কোন স্থানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিলে সেই ঘুর্নঝড়টি সৃষ্টি সম্বন্ধে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যায়। আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল একই সাথে প্রায় কাছা-কাছি সময়ে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘু চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করলেও লঘুচাপটি পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না তা নিয়ে দুইটি মডেল এক মত হতে পারে নি। এখানে উল্লেখ্য যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি নিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে থাকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল।

উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলই নির্দেশ করতেছে যে ২৪ শে মে আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে একটি লঘুচাপটি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা। কিন্তু মডেলগুলো কিছুটা ভিন্ন-ভিন্ন স্থানে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে এর প্রধান কারণ হলও আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো মে মাসের ২২ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে সাব-ট্রপিকাল জেট-স্ট্রিমের অবস্থান ভারত ও বাংলাদেশের আকাশের ভিন্ন-ভিন্ন স্থানে উপস্থিতি নির্দেশ করতেছে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি কোন স্থানের উপকূলে আঘাত করতে পারে তার অন্যতম প্রধান প্রভাবক হিসাবে কাজ করবে সাব-ট্রপিকাল জেট-স্ট্রিমের অবস্থান।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল অনুসারে মে মাসের ২২/২৩ তারিখে ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বিপের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের গভীর সমুদ্রের উপরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। এই লঘু চাপটি পরবর্তীতে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের পরিণত হয়ে ২৫ শে মে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্যের উপকুলে আঘাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে।  

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ শে মে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্যের উপকুলে আঘাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে (১৬ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)। 

আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রিমাল মে মাসের ২৫ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে উপকূলে আঘাত করতে পারে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির ক্ষতিকর প্রভাব সর্বনিম্ন পরিমাণে নামিয়ে আনতে দরকার পূর্ব-প্রস্তুতি

কৃষকদের জন্য পরামর্শ

সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশের বেশিভাগ জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে। ফলে বাংলাদেশের কৃষকদের অনুরোধ করবো প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিয়ে রাখার জন্য। জমিতে পাকা ধান থাকলে তা কেটে মড়াই করাে জন্য। শাক-সবজির জমিত যেন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জামা হওয়া বৃষ্টির পানি জমে শস্যের ক্ষতি না করে।

সমুদ্র-গামী জেলেদের জন্য পূর্বাভাস

সম্ভাবনা খুবই বেশি মে মাসের ২২ তারিখ থেকে সমুদ্র উত্তাল হওয়া। সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেরা যেন অবশ্যই মে মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে উপকূলে ফেরত চলে আসে। মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে সমুদ্রে অবস্থান করা কোন ভাবে নিরাপদ হবে না। মে মাসের ২০ তারিখের পর থেকে নতুন করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

লবন চাষিদের জন্য পরামর্শ:

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার লবনচাষিদের জানানো যাচ্ছে যে মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে তা মে মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মাঠে থাকা লবণ মে মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে তুলে ফেলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ-গামী পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা

মে মাসের ২৪ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত টেকনাফ-টু-সেন্টমার্টীন নৌ-পথে সমুদ্র প্রচণ্ড উত্তাল থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই সেন্টমার্টীন দ্বীপের ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের ২৪ তারিখের পূর্বে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles