ঘূর্ণিঝড় রেমাল আপডেট ১৮ (মে ২৬, বিকেল ৫ টা): স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশংকা খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে উপকূলীয় জেলাগুলো
ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর সর্বশেষ অবস্থা (২৬ শে মে বিকেল ৫ টা)
আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষন করে জানা যাচ্ছে যে আজ দুপুর ৩ টার সময় ঘুর্নিঝড় রেমালের কেন্দ্রের অবস্হান ছিলো ২০ দশমিক ৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮ দশমিক ৯ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপর। ঘুর্নিঝড় রেমাল তার গতি বৃদ্ধি করেছে সকাল ৯ টার পর থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত ঘন্টায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। আজ রবিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫ টায় জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের ঘূর্ণনের চলমান চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর কেন্দ্র প্রায় ২০ দশমিক ৯ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮ দশমিক ৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপর অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে অবস্থান করছিল। যেহেতু বর্তমান অবস্থান থেকে সামনের দিকে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেশি ফলে আজ সকাল ৬ টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালি হওয়ার শুরু করার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।
জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে ঘূর্ণিঝড় রেমাল তার সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করতে যাচ্ছে রাত ৯ টার মধ্যে। এই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘন্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার যা দমকা হাওয়া সহ ঘন্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে বিশ্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল।
সর্বোচ্চ গতিবেগের (১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার) বাতাস নিয়ে উপকূলে আঘাতের কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয়ে জেলাগুলোর জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ব্যাপক প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আজ রবিবার রাতের জোয়ারের সময় সাতক্ষীরা, খুলনা বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ও নোয়াখালী জেলার নদ-নদী ও চর অঞ্চলগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় সিডরের পরে সবচয়ে উঁচু জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলো। আজ রাতে মংলা পশুরু নদীতে যখন জোয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে ঠিক সেই সময়ে ঘূর্ণিঝড় রেমাল তার সর্বোচ্চ গতি অর্জন করার আশংকা করা যাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের উপকূলে আঘাতের সম্ভব্য স্থান ও সময়
ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর বাম দিকের কিছু অংশ (৩০ থেকে ৪০ %) পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুর জেলা এবং বেশিভাগ অংশ (৪০ থেকে ৬০%) বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার আশংকা বেশি। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলা, ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরগুনা জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগে প্রবেশ করার সম্ভাবনা ৯০ % এর বেশি।
ছবি বর্ণনা: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর ৫১ টি সম্ভব্য যাত্রাপথ ও বাতাসের গতিবেগের চিত্র। এই চিতটিকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) বলা হয়।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর অগ্রভাগ আজ রবিবার সকাল ৯ টার পর খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরগুনা জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগ স্পষ্ট করে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র আজ বিকেল ৬ টার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা এবং বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরগুনা জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগে প্রবেশ করার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের পিছনের অর্ধেক অংশ রাত ১২ টার পর থেকে সোমবার সকাল ৬ টার মধ্যে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
আজ রবিবার বিকেল ৬ টার পর থেকে শুরু করে আগামীকাল সোমবার সকাল ৯ টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টিপাতের (২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত) আশংকা করা যাচ্ছে।
সবচেয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের আশংকা করা যাচ্ছে নিম্নলিখিত জেলাগুলোর উপরে:
খুলনা বিভাগ: সকল জেলা
বরিশাল বিভাগ: সকল জেলা
ঢাকা বিভাগ: পদ্মা নদীর পশ্চিম পাশের সকল জেলা
চট্টগ্রাম বিভাগ: চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি
ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী
১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।
২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না।