আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মে মাসের ১০ তারিখে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পূর্বে আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে তা ঘূর্ণিঝড় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে গত ২৪ শে এপ্রিলের পর থেকে। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি যে আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম যখন পর-পর ৩ দিন একই স্থানের আস-পাশে নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করে, সেই নিম্নচাপ বাস্তবেও সৃষ্টি হয়।
মে মাসের ১ তারিখের মধ্যে মোটা-মুটি নিশ্চিত হওয়ার যাবে প্রকৃত পক্ষে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে কিনা। সেই সাথে জানা যাবে যে যদি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তবে তা কোন পথে অগ্রসর হবে ও সম্ভব্য কোন উপকূলে আঘাত করতে পারে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া কোন ঘূর্ণিঝড় কি পরিমাণ শক্তিশালী হতে পারে তা নির্ভর করে নিম্নচাপটি বঙ্গোপসাগরের কোন স্থানে (দক্ষিণ/মধ্য/উত্তর বঙ্গোপসাগরে) সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পরে চলার পথে সমুদ্রপৃষ্ঠে অপেক্ষাকৃত গরম পানির উপর দিয়ে নাকি ঠাণ্ডা পানির উপর দিয়ে উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে তার উপর।
মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতীয় উপমহাদেশের উপর জেট স্টিমের গতিপথ ও আবহাওয়ার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশেষ করে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উচ্চতায় বায়ুপ্রবাহের দিক ও মান, বায়ুচাপ, বায়ু শিয়ার, সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য ২৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পানির তাপমাত্রা, সমুদ্রে জমা হয়ে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় তাপীয় শক্তির বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম যে নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছেতা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা নোয়া এর ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টার মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনার কথা পূর্বাভাস করেছে।
বঙ্গোপসাগরে ২ টি ঘূর্ণিঝড় মৌসুম: বর্ষাকালের পূর্বে এপ্রিল, মে, ও জুন মাসে ও অন্য মৌসুমটি বর্ষাকালের পরে অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। যেহেতু পুরো এপ্রিল মাসে উত্তর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে কোন নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় নি তাই বঙ্গোপসাগরে ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক শক্তি জমা হয়ে গেছে। ফলে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে ও অনুকূল পরিবেশ পেলে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় এর ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করতে দেখা যায় যে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে মে মাসে খুবই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। বাতাসের গতিবেগ, ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা, জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা, প্রাণহানি ওভারঅল সবকিছু বিবেচনায় নিলে বঙ্গোপসাগরে এই পর্যন্ত আঘাত হানা সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হল ২৯ এপ্রিল, ১৯৯১ সালে যা চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার উপকূলে আঘাত করেছিল যার কারণে ২ লক্ষের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল (বেসরকারি হিসাবে অনুসারে)। ২০২০ সালে সুপার সাইক্লোন আম্পান স্থলভাগে আঘাত করেছিল মে মাসের ২০ তারিখে, ঘণ্টায় প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার উপকূলে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানকে নামকরণ করা হয়েছে সুপার-সাইক্লোন হিসাবে কারণ সমুদ্রে থাকা অবস্থায় আম্পানের বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (WMO/ESCAP Panel on Tropical Cyclones) তথ্য অনুসারে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে যদি কোন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তবে সেই ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে মোচা (Mocha)। মোচা নামটি দিয়েছে সৌদি আরবের প্রতিবেশী দেশ ইয়েমেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: গণমাধ্যম কর্মীদের অনুরোধ এমন কোন রকম মুখরোচক শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবেন যা আমার পোষ্টে উল্লেখ করি নি। বা আমার পোষ্টে উল্লেখিত তথ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায় না।
ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী
১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।
২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না।