ঘুর্নিঝড় মোখা (সাম্ভব্য) ভোলা থেকে কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী স্থান নিয়ে উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ

আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্যে অনুসারে গতকাল রাত ১২ টার সময় ইনভেস্ট ৯১বি (INVEST 91B) এর অবস্থান ছিলও ৬ দশমিক ১ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯৩ দশমিক ৪ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। আজ সকাল ৭ টার সময় জাপানের হিমাওয়ারি ৯ নামক কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে ইনভেস্ট ৯১বি (INVEST 91B) এর কেন্দ্রের অবস্থান ৬ দশমিক ৫ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। ইনভেস্ট বর্তমানে যে স্থানে অবস্থান করতেছে সেই স্থানে উ-লম্ব বায়ু শিয়ায়ের মান ১০ থেকে ১৫ ও সমুদ পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ৩১ থেকে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বায়ু শিয়ায়ের এই মান সমুদ্র পৃষ্ঠের এই তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য স্বচ্ছয়ে আদর্শ অবস্থা। ইনভেস্ট ৯১ বি আগামী ২৪ থেকে ২৮ ঘণ্টা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ইনভেস্টের কেন্দ্রে বায়ুচাপ ১০০৫ মিলিবার পরিমাপ করা হয়েছে। কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে ইনভেস্টের কেন্দ্রে বায়ুর গতিবেগ প্রায় ২৫ কিলোমিটার পরিমাপ করা হয়েছে। ইনভেস্ট ৯১ বি আগামীকালের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিন্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা ১০ ই মে সামুদ্রিক ঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মে মাসের ১১ তারিখে পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হও্যার সম্ভাবনা রয়েছে। ১১ তারিখ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ১০ ও ১১ তারিখে। এর পরে ১২ ই মে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-পূর্ব দিকে বাংলাদেশ ও মায়ানমার উপকূলের দিয়ে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে।

আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা ভোলা থেকে কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী স্থান নিয়ে উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ। মোখা এর কেন্দ্রের অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত শুর করার সম্ভব্য সময় ১৪ ই মে এর দুপুরের পর থেকে মধ্য রাত্রির মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় এর কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভব্য সময় ১৪ মে দিবাগত রাত ১২ টা থেকে ভোর ৬ টা। ঘূর্ণিঝড় মোখা এর পিছনের অর্ধেক অংশ উপকূলে অতিক্রম করার সম্ভব্য সময় ১৫ ও মে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত করার সময় এটি অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় কিংবা তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় মোখার বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠার সম্ভাবনা রয়েছে ১৬০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার (সমুদ্রে থাকা অবস্থায়) ও উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠার সম্ভাবনা রয়েছে ১৩০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো ৭ থেকে ১০ ফু উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের পানিতে প্রালবিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ছোট নৌকার জেলেদের জন্য ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা (সোমবার, ৮ ই মে, ২০২৩) আজ দিনের শেষ ভাগে কিংবা আগামীকাল মঙ্গলবার ৯ ই মে, দুপুরের মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নিম্নচাপটি ১০ ই মে দিনের কোন এক সময় পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উপকূলীয় এলাকার কোন জেলে ছোট নৌকা নিয়ে ৯ ই মে এর পরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে গভীর বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্য যাত্রা করলে প্রাণ নিয়ে উপকূলে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতিমধ্যে আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের চার পাশে জেলেদের মাছ ধরা ও চলাচল না করার জন্য সতর্কতা জারি করেছে।

সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা এর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন রাখার জন্য নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে।

১) ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো আগামীকাল থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা শুরু করা।

২) কৃষক ভাইদের সকল পাকা ধান মে মাসের ১২ তারিখের মধ্যে কেটে গোলায় তুলা 

৩) উপকূলীয় এলাকার মৎসচাষিদের জলোচ্ছ্বাস থেকে মাছের ঘের রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়া

৪) লবণ চাষিদের মে মাসের ১২ তারিখের মধ্যে সকল লবণ তুলে ফেলা

৫) জেলে ভাইদের অনুরোধ জানাচ্ছি ১০ তারিখের পরে নতুন করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণে না যাওয়ার জন্য। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের জেলেরা যেন অবশ্যই ১১ ই মে এর মধ্যে ও খুলনা বিভাগের জেলেরা অবশ্যই ১২ ই মে এর মধ্যে উপকূলে ফিরে। ১১ ই মে এর পরে যদি কোন জেলে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় তবে প্রাণ নিয়ে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম। 

৬) বন্যা ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতি বিনীত অনুরোধ উপকূলীয় সকল বেড়িবাঁধের সকল ত্রুটি কিংবা দুর্বল স্থান গুলো মে মাসের ১২ তারিখের পূর্বেই মেরামত করার জন্য। 

 

*****************************************************************

******** সংবিধি বধ্য সতর্কীকরণ********

*****************************************************************

এই ওয়েবসাই থেকে সংগৃহীত তথ্য সূত্র উল্লেখ না করে প্রকাশ করা সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। তবে যথাযথ ভাবে নিম্নোক্ত সূত্র উল্লেখ পূর্বক প্রকাশে কোন বাধা নেই।

মোস্তফা কামাল পলাশ,
আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক,
সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles