সোমবারের (নভেম্বর ২৭, ২০২৩) বৃষ্টিপাত ও কুয়াশা পূর্বাভাস এবং বঙ্গোপসাগরে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় এর আপডেট ৬
বঙ্গোপসাগরে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় আপডেট ৬, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
আজ ২৭ ই নভেম্বর, সোমবার, দুপুর ২ টার সময় জাপান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত দৃশ্যমান চিত্র (visible imagery) বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমা লঘু চাপের কারণে সৃষ্ট মেঘ ভারতের ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের উপর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হওয়া শুরু করেছে। একই সময়ে ভারতের গুজরাট রাজ্যের উপরে একটি লঘুচাপ অবস্থান করতেছে যার জন্য সৃষ্টি হওয়া মেঘ উত্তর-পূর্ব দিকে বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে আজ সোমবার থেকে বাংলাদেশের আকাশের উপর মেঘের উপস্থিতি দেখার যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ১ সপ্তাহ এই মেঘের পরিমাণ ক্রমাগত ভাবে বাড়তে থাকবে।
আজ সকাল ৯ টার সময় ঢাকা বিমান বন্দরে বায়ুচাপ পরিমাণ করা হয়েছে ১০১৭ মিলিবার, যা গতকাল অপেক্ষা ২ মিলিবার কম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা শহরের উপরে বায়ুচাপ ছিলও ১০১৭ মিলিবার, যা গতকাল অপেক্ষা ২ মিলিবার কম। মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনে শহরের উপরে বায়ুচাপ ছিলও ১০১৪ মিলিবার। ঢাকা ও কোলকাতা শহরের উপরে বায়ুচাপ কমলেও আজ সোমবারও উল্লেখিত ৩ টি আবহাওয়া স্টেশনে বায়ু চাপের এই মান নির্দেশ করতেছে যে ভারতের মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপরে ভূ-পৃষ্ঠের উপরে উচ্চ বায়ুচাপ বিরাজ করতেছে। ভূ-পৃষ্ঠের কাছা-কাছি স্থানে বায়ুর উচ্চ-চাপ অবস্থা বিরাজ করলে সেই স্থানে বৃষ্টি হওয়ার মতো উঁচু মেঘ সৃষ্টি হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
আজ সোমবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কোন জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত আবহাওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করেও দেখা যাচ্ছে যে আজ সোমবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ২ টার মধ্যে বাংলাদেশের অন্য কোন জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা নাই।
ছবি: জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত (দুপুর ২ টা) মেঘের চিত্র বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উপর
৩ দিনের বৃষ্টিপাত পূর্বাভাস (নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত)
আজ সোমবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত আবহাওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আগামী বৃহঃপতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জেলাগুলোর উপরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কোন-কোন জেলার উপরে খুবই হালকা পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার পর থেকে আগামী বৃহঃপতিবার দুপুর ১২ টার মধ্যে।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত কুয়াশা পূর্বাভাস
আজ সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ঘনত্বের কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কোন-কোন জেলার উপরে। অপেক্ষাকৃত বেশি কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ টি জেলা, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী জেলার উপরে।
পশ্চিমবঙ্গের উপর বৃষ্টিপাত ও কুয়াশার পূর্বাভাস
আজ সোমবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ২ টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, ও বর্ধমান জেলার উপরে সামান্য পরিমাণে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
আজ সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের কোন-কোন জেলার উপরে হালকা পরিমাণে কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে আবারও একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে ২৮ শে নভেম্বর থেকে ৫ ই ডিসেম্বরের মধ্যে
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে আজ সোমবার আন্দামান ও নিকবার দ্বিপের দক্ষিন-পশ্চিম দিকে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে।
লঘুচাপটি ২৯ নভেম্বর এর মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ও ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে ও ডিসেম্বর মাসের ৩ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ডিসেম্বর মাসের ৩ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলে থেকে মায়ানমারের রাখাই রাজ্যের মধ্যবর্তী কোন এলাকার উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সম্ভাবনা বেশি যে এই ঘূর্ণিঝড়টিও একই পথে উপকূলে আঘাত করার যে পথে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় মিধিলি। অর্থাৎ বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যবর্তী উপকূলীয় জেলাগুলোর উপর দিয়ে।
ছবি বর্ণনা: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির ৫১ টি সম্ভব্য যাত্রাপথ ও বাতাসের গতিবেগের চিত্র। এই চিত্রটিকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) বলা হয়।
আজ ২৭ শে নভেম্বর আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল এর পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলোর উপরে দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল অনুসারে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ কিংবা ওড়িশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করলেও আজ ২৭ শে নভেম্বরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করেছে।
উপরে উল্লেখিত ২ টি আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলই নির্দেশ করতেছে যে ২৮ থেকে ২৯ শে নভেম্বর আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে একটি লঘুচাপটি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা। ২ টি মডেল কিছুটা ভিন্ন-ভিন্ন স্থানে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে এর প্রধান কারণ হলও দুইটি মডেল ডিসেম্বর মাসের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে সাব-ট্রপিকাল জেট-স্ট্রিমের অবস্থান ভারত ও বাংলাদেশের আকাশের ভিন্ন-ভিন্ন স্থানে উপস্থিতি নির্দেশ করতেছে।
সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি কোন স্থানের উপকূলে আঘাত করতে পারে তার অন্যতম প্রধান প্রভাবক হিসাবে কাজ করবে সাব-ট্রপিকাল জেট-স্ট্রিমের অবস্থান। ডিসেম্বর মাসের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে সাব-ট্রপিকাল জেট-স্ট্রিমের অবস্থান ভারত ও বাংলাদেশের আকাশের কোন স্থানের উপর ও কোন এঙ্গেলে অবস্থান করবে তার উপর নির্ভর করবে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা, বরিশাল কিংবা চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত করবে কি না।
বাংলাদেশের উপকূলে আঘাতের সম্ভাব্য সময়: ৫ ই ডিসেম্বর থেকে ৭ ই ডিসেম্বর এর মধ্যে।
বাতাসের সম্ভব্য গড় গতিবেগ: ঘন্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার
বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ (দমকা হাওয়া): ঘন্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার
জলোচ্ছ্বাসের সম্ভব্য উচ্চতা: স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৭ ফুট বেশি
সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির ক্ষতিকর প্রভাব সর্বনিম্ন পরিমাণে নামিয়ে আনতে দরকার পূর্ব-প্রস্তুতি
কৃষকদের জন্য পরামর্শ
সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলার কৃষকদের অনূর্ধ্ব করবো যে জমিতে পাকা ধান থাকলে তা কেটে মড়াই করাে জন্য। শীতকালীন শাক-সবজির জমিত যেন ঘূর্ণিঝড়ের সময় যেন পানি জমে শস্যের ক্ষতি না করে।
সমুদ্র-গামী জেলেদের জন্য পূর্বাভাস
সম্ভাবনা খুবই বেশি আগামী সপ্তাহের সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যের উপকূলে আঘাত করার। সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেরা যেন অবশ্যই ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখের মধ্যে উপকূলে ফেরত চলে আসার প্রস্তুতি নিয়ে রাখে; কিংবা সেই হিসাব করেই সমুদ্রে যাত্রা করে যে জেলেরা এই সপ্তাহে সমুদ্রে যাত্রা করার পরিকল্পনা করেছেন।
ঘূর্ণিঝড়কে শক্তিশালি হতে সাহায্য করে এই রকম আবহাওয়া সম্পর্কিত অনেক সূচকই অনুকূলে রয়েছে বা থাকবে আগামী সপ্তাহে; তাই আশংকা করা হচ্ছে যে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি সর্বশেষ ২ টি ঘূর্ণিঝড় (হামান ও মিধিলি) অপেক্ষা বেশি শক্তিশালি হতে পারে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ-গামী পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা
ডিসেম্বর মাসের ৩ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত টেকনাফ-টু-সেন্টমার্টীন নৌ-পথে সমুদ্র প্রচণ্ড উত্তাল থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে যার কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী
১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।
২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না।