বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় মিধিলি হিসাবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলে আঘাতের সম্ভাবনা শুক্রবার দুপুর থেকে মধ্য রাতের মধ্যে

আপডেট ৯, বৃহঃপতিবার, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৩

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি আজ বৃহঃপতিবার সকালে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার দুপুর ১২ টার পর থেকে রাত ১২ টার মধ্যে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা শতকরা ৯০% এর বেশি। স্থল ভাগে আঘাতের সম্ভব্য স্থান খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলোর উপর দিয়ে। আশংকা করা যাচ্ছে যে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখে ঘূর্ণিঝড় সিতরাং যে জেলাগুলোর উপর দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করেছিল প্রায় একই জেলাগুলোর উপরে দিয়ে স্থল ভাগ অতিক্রম করার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি (ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে পরিণত হওয়ার কিছু সম্ভাবনা রয়েছে)।

আজ বৃহঃপতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টা বেজে ৩০ মিনিটে জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের কারণে সৃষ্টি হওয়া বহিঃস্থ বৃষ্টিবলয় (Outer Rainbands) আজ বৃহঃপতিবার বিকালের পর থেকে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করা শুরু করেছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোর উপরে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তা আগামী শানিবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমেরিকান নৌ বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার হতে জারি করা সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে গভীর নিম্নচাপটির ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সামান্য সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে। গভীর নিম্নচাপটি স্থল ভাগে আঘাত করার কিছু পূর্বে ঘূর্ণিঝড় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গভীর নিম্নচাপটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় তবে নাম হবে “মিধিলি”। এই নামটি মালদ্বীপের দেওয়া। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হলেও গভীর নিম্নচাপ হিসাবে বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকার উপরে দিয়ে স্থল ভাগ অতিক্রম করার আশংকা করা যাচ্ছে শুক্রবার দুপুরের পর থেকে রাত ৩ টার মধ্যে।

আজ রাত ৮ টা বেজে ২০ মিনিটের সময় জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রটি ১৯ দশমিক ৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৭ দশমিক ৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপরে অবস্থান করছিল ও উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে যে পথে অগ্রসর হচ্ছে গভীর নিম্নচাপটি সেই পথে যাত্রা অব্যাহত থাকলে প্রায় ৮০ থেকে ৯০% নিশ্চয়তা সহকারে পূর্বাভাস করা যায় যে গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলে আঘাত করতে যাচ্ছে সরাসরি। তবে গভীর নিম্নচাপটি যদি সামান্য পরিমাণে পূর্ব দিকে সরে যায়, তবে গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্র বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে অতিক্রম করবে গভীর নিম্নচাপের বহিঃস্থ অংশ চট্টগ্রামের নোয়াখালী, ফেনী ও উত্তর চট্টগ্রাম জেলা ও খুলনা বিভাগের বাগেরহাট ও খুলনা জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগে প্রবেশ করবে। গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগে প্রবেশ করার আশংকা করা যাচ্ছে।

গাভীর নিম্নচাপটি প্রভাবে বাংলাদেশের উপর বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে শনিবার দুপুর পর্যন্ত। গভীর নিম্নচাপের কারণে সর্বোচ্চ পরিমাণের বৃষ্টিপাতের ঝুঁকিপূর্ণ জেলাসমূহ নিম্নরূপ:

সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, ফরিদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগন্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাক্ষমবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, ও চট্টগ্রাম জেলা। 


ছবি বর্ণনা: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত সম্ভব্য নিম্নচাপটির ৫১ টি সম্ভব্য যাত্রাপথ ও বাতাসের গতিবেগের চিত্র। এই চিতটিকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) বলা হয়। 

বাংলাদেশের উপকূলে আঘাতের সম্ভাব্য সময়: ১৭ ই নভেম্বর দুপুর ১২ টার পর থেকে দিবাগত রাত ৩ টার মধ্যে।

বাতাসের সম্ভব্য গড় গতিবেগ: ঘন্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার
বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ (দমকা হাওয়া): ঘন্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার

জলোচ্ছ্বাসের সম্ভব্য উচ্চতা: স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি

বৃষ্টিপাতের সম্ভব্য পরিমাণ (১৬ ই নভেম্বর মধ্য রাতের পর থেকে ১৮ ই নভেম্বর দুপুর ১২ টা পর্যন্ত):

১) বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো: ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার
২) খুলনা বিভাগের জেলাগুলো: ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার
৩) ঢাকা বিভাগের জেলাগুলো: বিভাগ ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার
৪) চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলো: ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার
৫) সিলেট বিভাগের জেলাগুলো ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার
৬) রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো: ৫০ থেকে ৭৫ মিলিমিটার
৭) ময়মনিসংহ বিভাগের জেলাগুলো: ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার
৮) রংপুর বিভাগের জেলাগুলো: ২৫ থেকে ৫০ মিলিমিটার। 

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেলের (ECMWF Integrated Forecasting System) পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য লঘুচাপ টির কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের উপরে সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। 

ছবি: আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেলের পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য লঘুচাপ টির কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের উপরে সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপর সম্ভব্য প্রভাব:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি আজ বৃহঃপতিবার রাত ৯ টার সময় ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকূল ঘেঁষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উপকূলের দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। আজ বৃহঃপতিবার দিবাগত মধ্যরাতের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের জেলাগুলোর উপরে মাঝারি থেকে ভারি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে হাওড়া, হুগলী, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর, বর্ধমান জেলার উপরে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার (১৬ ই নভেম্বর মধ্য রাতের পর থেকে ১৮ ই নভেম্বর দুপুর এর মধ্যে।)

 

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles