বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় (Biparjoy)/তেজ সৃষ্টি (৬ থেকে ৯ জুনের মধ্যে) ও বাংলাদেশ উপকুলে আঘাতের (৯ থেকে ১৩ জুনের মধ্যে) সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

বিশ্বের সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ২ টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে প্রায় একই সময়ে। এখানে উল্লেখ্য যে উত্তর ভারত মহাসাগরে (আরব সাগর বঙ্গোপসাগর নিয়ে গঠিত) পরবর্তী যে ২ টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে তার নাম হবে যথাক্রমে বিপর্যয় (Biparjoy) ও তেজ (Tej)। বিপর্যয় নামটি বাংলাদেশের দেওয়া ও তেজ নামটি ভারতের দেওয়া। 

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেলের (ECMWF Integrated Forecasting System) পুর্বাভাস অনুসারে লঘু চাপ সৃষ্টির সম্ভব্য সময় ৬ ই জুন, ২০২৩।

ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়টি প্রথমে সৃষ্টি হবে (৬ থেকে ৮ জুনের মধ্যে) ও আরব সাগরের সৃষ্টি হবে পরে (৭ থেকে ৯ জুনের মধ্যে)। ইউরোপিয়ান মডেলের পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের মধ্যবর্তী কোন স্থানের উপকূল দিয়ে স্থল ভাগে আঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে জুন মাসের ৯ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে। 

ছবি: আমারিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের (Global Forecast System) পুর্বাভাস অনুসারে লঘু চাপ সৃষ্টির সম্ভব্য সময় ১১ ই জুন, ২০২৩।

পক্ষান্তরে আমেরিকান গ্লোবাল পথকষ্ট সিস্টেম মডেল অনুসারে আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়টি প্রথমে সৃষ্টি হবে (৬ থেকে ৮ জুনের মধ্যে) ও বঙ্গোপসাগরের সাগরের ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হবে পরে (১১ থেকে ১২ জুনের মধ্যে)। আমেরিকান মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় (আরব সাগরে সৃষ্টি হবে) ইয়েমেনের পূর্ব উপকূলে ও ঘূর্ণিঝড় তেজ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলীয় এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকার মধ্যবর্তী কোন স্থানের উপর দিয়ে জুন মাসের ১৩ থেকে ১৪ তারিখ স্থল ভাগের আঘাত করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পূর্বে আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে তা ঘূর্ণিঝড় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে গত ২৮ শে মে থেকে। আজ ৩১ শে মে থেকে আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। একই ভাবে কানাডার ও জার্মানির আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলও বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি যখন একই সাথে ইউরোপিয়ান ও আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল একই স্থানের আস-পাশে নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করে সেই নিম্নচাপ বাস্তবেও সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক আত্মবিশ্বাস সহকারে বলা যাচ্ছে যে জুন মাসের ২য় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

জুন মাসের ২ তারিখের মধ্যে মোটা-মুটি নিশ্চিত হওয়ার যাবে প্রকৃত পক্ষে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে কিনা। সেই সাথে জানা যাবে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি কোন পথে অগ্রসর হবে ও সম্ভব্য কোন স্থানের উপর দিয়ে উপকূলে আঘাত করবে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া কোন ঘূর্ণিঝড় কি পরিমাণ শক্তিশালী হতে পারে তা নির্ভর করে নিম্নচাপটি বঙ্গোপসাগরের কোন স্থানে (দক্ষিণ/মধ্য/উত্তর বঙ্গোপসাগরে) সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পরে চলার পথে সমুদ্রপৃষ্ঠে অপেক্ষাকৃত গরম পানির উপর দিয়ে নাকি ঠাণ্ডা পানির উপর দিয়ে উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে তার উপর। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের উত্তর দিকে লঘু চাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেই ক্ষেত্রে সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা অগভীর সমুদ্রে সৃষ্টি হবে ও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা বেশি। ফলে এই ঘূর্ণিঝড়টি খুব বেশি শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতীয় উপমহাদেশের উপর জেট স্টিমের গতিপথ ও আবহাওয়ার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশেষ করে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উচ্চতায় বায়ুপ্রবাহের দিক ও মান, বায়ুচাপ, বায়ু শিয়ার, সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য ২৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পানির তাপমাত্রা, সমুদ্রে জমা হয়ে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় তাপীয় শক্তির বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা খুবই বেশি। 

ছবি বর্ণনা: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় মোখার ৫১ টি সম্ভব্য যাত্রাপথ ও বাতাসের গতিবেগের চিত্র। এই চিতটিকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) বলা হয়। 

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড়টির স্হল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনার (%) পরিমানের মানচিত্র।

 

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles