বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় “দানা” বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপকূলে আঘাতের আশংকা: ৬ নম্বর আপডেট (২১ শে অক্টোবর, বিকেল ৪ টা)
জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘু চাপটি গত ২৪ ঘন্টায় শক্তি অর্জন করে আজ আজ সোমবার বিকেল ৪ টার সময় সু-স্পষ্ট লঘু চাপে পরিণত হয়েছে। আজ বিকেল ৪ টার সময় সু-স্পষ্ট লঘু চাপটির কেন্দ্র প্রায় ১৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপরে অবস্থান করতেছি। সু-স্পষ্ট লঘু চাপটির কেন্দ্রের চার পাশে বায়ুর গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার।
Picture: জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত সু-ষ্পষ্ট লঘুচাপের কারণে সৃষ্ট ঘুর্নয়মান মেঘের চিত্র (বিকেল ৪ টার সময় ধারণকৃত ছবি)। যে স্হানের মেঘের রং যত বেশি গাড় লাল সেই স্হানের মেঘের উচ্চতা তত বেশি ও সেই স্হানে তত ভারি বৃষ্টি হচ্ছে।
সু-স্পষ্ট লঘু চাপটির বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে ও আগামী ২ দিন একই পথে অগ্রসর হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে। সু-স্পষ্ট লঘু চাপটি বর্তমানে যে স্থানে আছে সেই স্থানে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এখানে উল্লেখ্য যে ঘুর্নিঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে যে স্থানের পানির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস অপেক্ষা বেশি থাকে। সু-স্পষ্ট লঘু লঘু চাপটির বর্তমান স্থান থেকে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগরের পানি পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ সু-স্পষ্ট লঘু চাপটি আগামী ৩ দিন ক্রমাগত ভাবে শক্তিশালি হতে থাকার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।
আজ সোমবার দুপুর ৩ টার সময় ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া সম্ভব্য ঘুর্নিঝড় “দানা” এর সম্ভব্য গতিপথ ও স্থল ভাগে আঘাতের স্থানের মানচিত্র প্রকাশ করেছে।
গতকাল রবিবার আমি ঘুর্নিঝড় “দানা” এর জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সময় উল্লেখ করেছিলাম ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর আজকে প্রকাশিত পূর্বাভাসে ঠিক একই সময় উল্লেখ করেছে। আমার পূর্বাভাসে উল্লেখ করেছিলাম যে সোমবার নিম্নচাপে, মঙ্গলবার গভীর-নিম্নচাপে, এবং বুধবার (২৩ শে অক্টোবর) পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আজকে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের পূর্বাভাসে ঠিক একই সময় উল্লেখ করেছে। শুধু তাই না, আমি গতকালকেই উল্লেখ করেছিলাম যে ঘুর্নিঝড় “দানা” তীব্র ঘুর্নিঝড় বা Severe Cyclonic Storm (89–117 km/h) হিসাবে স্থল ভাগে আঘাত করার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর একই পূর্বাভাস দিয়েছে আজকে।
আমি গতকাল সোমবার আমার দেওয়া পূর্বাভাসে উল্লেখ করেছিলাম যে স্থল ভাগে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘন্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের পূর্বাভাসে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘন্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার উল্লেখ করেছে।
তবে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘুর্নিঝড় “দানা” যে স্থানে (ওড়িশা রাজ্যের পুরী ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূল দিয়ে) আঘাত করার কথা নির্দেশ করেছে আমি তাদের পূর্বাভাসের সাথে একমত না। আমি এখনও রবিবারে উল্লেখিত পূর্বাভাসের উপরেই আস্থা রাখতে চাই। অর্থাৎ, ঘুর্নিঝড়টি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এলাকার উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার আশংকা করছি।
বঙ্গোপসাগরে বর্ষা মৌসুমের পরে যে ঘুর্নিঝড়গুলো বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ২০০৯ সালে ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছিল ঘুর্নিঝড় একই পথে গিয়েছিল গড়ে ৬৫% সময়। অবশিষ্ট ৩৫ % সময়ে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর নির্দেশিত পথ এর বাহির দিয়ে গিয়েছিল। বঙ্গোপসাগরে “দানা” যে ঘুর্নিঝড়টি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে তা স্থল ভাগে আঘাত করার আশংকা করা যাচ্ছে ২৪ শে অক্টোবর। অর্থাৎ, আজ থেকে আরও ৩ দিন বা কমপক্ষে ৭২ ঘন্টা পরে।
বিশ্বের প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো দিনে কমপক্ষে ২ বার করে নতুন-নতুন পূর্বাভাস দেয়। আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ২ টি দিনে ৪ বার করে আবহাওয়া পূর্বাভাস তৈরি করে। প্রত্যেক বার আবহাওয়া পূর্বাভাস তৈরির পরে ঘুর্নিঝড়ের চলার পথ ও শক্তির পরিবর্তন হয়। স্থল ভাগে আঘাতের ৬ ঘন্টা পূর্বের পূর্বাভাস নির্দেশিত স্থল ভাগে আঘাতের স্থান থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ডানে কিংবা বামে আঘাত করতে পারে কোন ঘুর্নিঝড়। আজ সোমবার বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল সম্ভব্য ঘুর্নিঝড় “দানা” যে স্থানে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে সেই স্থান থেকে ডান দিকে ২০০ কিলোমিটার কিংবা বাম দিকে ২০০ কিলোমিটার দূরের কোন স্থানে আঘাত করতে পারে।
আজ ২১ শে অক্টোবর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস ঘূর্ণিঝড় “দানা” সৃষ্টির আশংকা ৯০ থেকে ১০০ %।
ঘুর্নিঝড় “দানা” আগামী ২৩ শে অক্টোবর দিবাগত রাত ১২ টার পর থেকে ২৪ শে অক্টোবর সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে সরাসরি তীব্র ঘুর্নিঝড় বা Severe Cyclonic Storm (89–117 km/h) হিসাবে স্থল ভাগে আঘাত করার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।
ঘুর্নিঝড়টি প্রায় একই পথে অগ্রসর হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে যে পথে ঘুর্নিঝড় আম্পান স্থাল ভাগে আঘাত করে অগ্রসর হয়েছিল। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের মেদনিপূর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা এবং বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার উপকূলে আঘাত করার আশংকা করা যাচ্ছে।
ঘুর্নিঝড় “দানা” স্থাল ভাগে আঘাত করার ৬ থেকে ১২ ঘন্টা পূর্বে তার সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করার আশংকা করা যাচ্ছে কারণ ঐ সময় ঘুর্নিঝড়টি পুরো বঙ্গোপসাগরের মধ্যে সবচেয়ে গরম পানির উপরে অবস্থান করার আশংকা করা যাচ্ছে।
—–> ঘুর্নিঝড় “দানা” সমুদ্রে থাকা অবস্থায় খুবই তীব্র ঘুর্নিঝড় বা Very Severe Cyclonic Storm (118–165 km/h) এর শক্তি অর্জন করার আশংকা করা যাচ্ছে।
—–> তবে স্থল ভাগে আঘাত করার সময় ঘুর্নিঝড়টি তীব্র ঘুর্নিঝড় বা Severe Cyclonic Storm (89–117 km/h) হিসাবে আঘাত করার আশংকা করা যাচ্ছে।
আজ ২০ ই অক্টোবর তারিখের পূর্বাভাস তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় “দানা” সম্বন্ধে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে।
সু-স্পষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভব্য সময়: ২১ তারিখ থেকে ২১ শে অক্টোবর
নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভব্য সময়: ২২ থেকে ২৩ শে অক্টোবর
গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভব্য সময়: ২২ থেকে ২৩ শে অক্টোবর
পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভব্য সময়: ২৩ থেকে ২৪ শে অক্টোবর
স্থলভাগে আঘাতের সম্ভব্য সময়: ২৩ শে অক্টোবর মধ্য রাতের পর থেকে ২৪ শে অক্টোবর মধ্য রাতের মধ্যে।
স্থলভাগে আঘাতের সম্ভব্য স্থান: ভারতের ওড়িশা রাজ্য ও বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার মধ্যবর্তী যে কোন উপকূলীয় এলাকা।
স্থল ভাগে আঘাতের সময় ঘুর্নিঝড় “দানা” এর বাতাসের সম্ভব্য সর্বোচ্চ গতিবেগ:
—> বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলে আঘাত করলে ঘন্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
——> বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের উপকূলে আঘাত করলে ঘন্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার।
—–> ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উপকূলে আঘাত করলে ঘন্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
—-> ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত করলে ঘন্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার।
ঘুর্নিঝড়ের কারণে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভব্য উচ্চতা:
সাতক্ষীরা, খুলনা, ও বাগেরহাট জেলা: স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ৭ থেকে ৮ ফুট বেশি (জোয়ারের সময়) ও স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি (ভাটার সময়)।
বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা: স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ৫ থেকে ৬ ফুট বেশি (জোয়ারের সময়) ও স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ১ থেকে ৩ ফুট বেশি (ভাটার সময়)।
নোয়াখালী, চট্টগ্রাম: স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি (জোয়ারের সময়) ও স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ২ থেকে ৩ ফুট বেশি (ভাটার সময়)।
কক্সবাজার: স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ২ থেকে ৪ ফুট বেশি (জোয়ারের সময়) ও স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ১ থেকে ৩ ফুট বেশি (ভাটার সময়)।
ঘুর্নিঝড়ের কারণে বিভিন্ন বিভাগে সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: ২৪ শে অক্টোবর থেকে ২৭ শে অক্টোবর পর্যন্ত
খুলনা বিভাগ: ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার
বরিশাল বিভাগ: ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার
রাজশাহী বিভাগ: ১৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটার
ঢাকা বিভাগ: ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার
রংপুর বিভাগ: ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার
চট্টগ্রাম বিভাগ: ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার
ময়মনসিংহ বিভাগ: ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার
সিলেট বিভাগ: ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার
ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী
১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।
২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না।