ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের উপকূলে আঘাত করা শুরু করেছে সোমবার সকাল থেকে: ৫ থেকে ৮ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা
ঘূর্ণিঝড় আপডেট ১৫ (ডিসেম্বর ৪, ২০২৩)
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের উপকূলে আঘাত করা শুরু করেছে সোমবার সকাল থেকে। ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর বৃত্তের বাম পাশের অংশ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাই শহরকে স্পর্শ করে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে উপকূলের সমান্তরালে। আজ দুপুর ৩ টার সময় ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের অবস্থান ছিলও ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৮১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ (13.7N 81.0E)। কোলকাতা বন্দ থেকে প্রায় ১২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছি ও এই সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলও ঘন্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার; দমকা হাওয়া সহ যা ঘন্টায় ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ঘূর্ণিঝড়টির কারণে সমুদ্রে ২৪ ফুট উঁচু ঢেউ এর সৃষ্টি হয়েছে। আজ সকালকে সূর্য উঠার কিছু পরেই ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। সকাল ৯ টার পর থেকে দুপুর ৩ টার মধ্যে, ঘূর্ণিঝড়টি ঘন্টায় প্রায় ১০ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল।
আশংকা করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত করা শুরু পূর্বে আরও কিছুটা শক্তিশালি খুবই তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে যে সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলও ঘন্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার; দমকা হাওয়া সহ যা ঘন্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘুর্নঝড়টি আজ সোমবার দুপুরের পরে যে স্থানে উপর দিয়ে অতিক্রম করিতেছিল সেই স্থানে ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালি হওয়ার জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করতেছে। বিশেষ করে উলম্ব বায়ুশিয়ারের মান ৫ থেকে ১৫ এর মধ্যে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম কেন্দ্র আগামীকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর এর মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের বিজয়ওয়াড়া শহরের (Vijayawada) উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার। এই শহরটি অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের ভিশাখাপত্তম সমুদ্র বন্দরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।
ছবি: আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার এর পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর সম্ভব্য চলার পথ ও বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ এর মানচিত্র।
২০২৩ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরে (বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর নিয়ে গঠিত) ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে সৃষ্টি হওয়া ৮ম পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড় এটি। গত ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলও ২০২৩ বছরে। ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম শেষ হতে আরও ১ মাস অবশিষ্ট রয়েছে। অশাংকা করা হচ্ছে ২০২৩ সালে গত ৫০ বছরের ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির রেকর্ড ভঙ্গ করবে।
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর প্রভাবে আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যে ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উপরে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। চেন্নাই সমুদ্র বন্দর ও অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের ভিশাখাপত্তম সমুদ্র বন্দরের মধ্যবর্তী স্থানের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার। উপকূলে আঘাতের সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়া সহ যা ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের উপরে ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর প্রভাব
ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার কোন সম্ভাবনা নাই। ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর প্রভাবে ৫ থেকে ৮ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে উপরে বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর বহিঃস্থ বৃষ্টিবলয়ের কারণে সৃষ্ট মেঘ থেকে আজ সোমবারও বিকেল থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার ভোর এর মধ্যে বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, ও সিলেট বিভাগের একাধিক জেলার উপরে হালকা পরিমাণে বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর প্রভাব পুরো বাংলাদেশের উপর বৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। এই দুইটি মডেল অনুসারে আগামীকাল মঙ্গলবার, ৫ ই ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর উপরে। বিশেষ করে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা বিভাগে উত্তরের জেলাগুলো, চট্টগ্রাম বিভাগের উত্তরের জেলাগুলোর উপরে। মডেলগুলো নির্দেশ করতেছে যে ৭ ই ডিসেম্বর প্রায় পুরো দেশের উপরে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা।
দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর উপরে ৭৫ থেকে ১২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার ও রংপুর, ময়মনিসংহ, ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ২৫ থেকে ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপরে বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোর উপরে সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ।
ছবি: ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত রাডার হতে প্রাপ্ত চিত্র অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর বৃষ্টিপাত এর মানচিত্র।
ছবি: ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত রাডার হতে প্রাপ্ত চিত্র অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর বাতাসের গতিবেগ এর মানচিত্র।
ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী
১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।
২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না।