ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উপকূলে আঘাত করেছে ও উপকূল অতিক্রম করেছে: ৮ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা 

ঘূর্ণিঝড় আপডেট ১৭ (ডিসেম্বর ৫, ২০২৩)

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম ( “MICHAUNG” (PRONOUNCED AS MIGJAUM)) এর কেন্দ্র আজ মঙ্গলবার ভোর ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উপকূলে আঘাত করা শুরু করেছে ও দুপুর ৩ টা বেজে ৩০ মিনিট পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির প্রায় ৭০ থেকে ৮০ % স্থলভাগে প্রবেশ করেছে (ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত রডার থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য অনুসারে)। আশা করা যাচ্ছে যে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের পুরো অংশ উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগে প্রবেশ করবে।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে উপকূল অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলও ঘন্টায় প্রায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার; দমকা হাওয়া সহ যা ঘন্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থলভাগে প্রবেশের পরে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম উত্তর দিকে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি সর্বশেষ ৬ ঘন্টায় গড়ে ১০ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে।


ছবি: আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার এর পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর সম্ভব্য চলার পথ ও বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ এর মানচিত্র।

২০২৩ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরে (বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর নিয়ে গঠিত) ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে সৃষ্টি হওয়া ৮ম পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড় এটি। গত ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলও ২০২৩ বছরে। ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম শেষ হতে আরও ১ মাস অবশিষ্ট রয়েছে। অশাংকা করা হচ্ছে ২০২৩ সালে গত ৫০ বছরের ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির রেকর্ড ভঙ্গ করবে। 

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর প্রভাবে আজ মঙ্গলবার ভোর থেকেই ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যে ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উপরে ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভারতীয় আব হাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে যে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২০০ মিলিমিটার এর বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্যের উপরে।

আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার যে স্থানের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করেছিল, ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম প্রায় একি স্থানের উপরে দিয়ে উপকূলে আঘাত করেছে। এমনকি উপকূলে আঘাতের সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকার সম্ভাবনা নির্দেশ করেছিল, ঘন্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার, প্রকৃত পক্ষে ঘূর্ণিঝড়টি সেই গতিবেগেই উপকূলে আঘাত করেছে। জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার নির্দেশিত দমকা হাওয়ার গতিবেনংহন্টায় ১১০ কিলোমিটার ও সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর প্রভাব পুরো বাংলাদেশের উপর বৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। এই দুইটি মডেল অনুসারে আজ মঙ্গলবার, ৫ ই ডিসেম্বর থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর উপরে। বিশেষ করে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা বিভাগে উত্তরের জেলাগুলো, চট্টগ্রাম বিভাগের উত্তরের জেলাগুলোর উপরে। মডেলগুলো নির্দেশ করতেছে যে ৭ ই ডিসেম্বর প্রায় পুরো দেশের উপরে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা।

দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর উপরে ৭৫ থেকে ১২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার ও রংপুর, ময়মনিসংহ, ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ২৫ থেকে ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।  

বাংলাদেশের উপরে ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর প্রভাব

ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার কোন সম্ভাবনা নাই।  ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর প্রভাবে ৫ থেকে ৮ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে উপরে বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। 

জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর কারণে সৃষ্ট মেঘে ঢাকা রয়েছে বাংলাদেশের বেশিভাগ জেলা।

ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর প্রভাব পুরো বাংলাদেশের উপর বৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। আজ মঙ্গলবার রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনিসংহ ও সিলেট বিভাগের কোন-কোন জেলার উপরে হালকা মানের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল বুধ ও বৃহঃপতিবার বাংলাদেশের বেশিভাগ জেলার উপরে হালকা থেকে মাঝারি পরিমাণে বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত।

ঘূর্ণিঝড় “মিগজাউম” এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর উপরে। বিশেষ করে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা বিভাগে উত্তরের জেলাগুলো, চট্টগ্রাম বিভাগের উত্তরের জেলাগুলোর উপরে। মডেলগুলো নির্দেশ করতেছে যে ৭ ই ডিসেম্বর প্রায় পুরো দেশের উপরে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা।

দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর উপরে ৭৫ থেকে ১২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার ও রংপুর, ময়মনিসংহ, ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ২৫ থেকে ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।  

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপরে বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোর উপরে সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ।

ছবি: ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত রাডার হতে প্রাপ্ত চিত্র অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর বৃষ্টিপাত এর মানচিত্র।

ছবি: ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত রাডার হতে প্রাপ্ত চিত্র অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর রিফলেকটিভিটি মানচিত্র।

ছবি: ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত রাডার হতে প্রাপ্ত চিত্র অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর বাতাসের গতিবেগ এর মানচিত্র। 

 

 

 

 

 

 

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles