ঘূর্ণিঝড় রেমাল আপডেট ১৬ (মে ২৬, সকাল ৭ টা): তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাতের আশংকা

ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর সর্বশেষ অবস্থা (২৬ শে মে সকাল ৬ টা বেজে ৩০ মিনিট পর্যন্ত)

আজ রবিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬ টায় জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের ঘূর্ণনের চলমান চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর কেন্দ্র প্রায় ১৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপর অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে প্রায় ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে দিকে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি সর্বশেষ ৬ ঘন্টায় গড়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যেহেতু বর্তমান অবস্থান থেকে সামনের দিকে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেশি ফলে আজ সকাল ৬ টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালি হওয়ার শুরু করার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আজ সকাল ৬ টার পর থেকে আজ মধ্যরাত পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় রেমাল ক্রামগত শক্তিশালি হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের বাতাস আজ সন্ধ্যা ৬ টার পর থেকে রাত ১২ টার মধ্যে সর্বোচ্চ শক্তি (ঘন্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার) অর্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে।   

ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর কারণে কখন থেকে উপকূলে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে কিংবা উচ্চ গতির বাতাস প্রবাহিত হতে পারে?

ঘূর্ণিঝড় রেমালের ব হিঃস্হ বৃষ্টি বলয় আজ ভোর ৪ টার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর উপরে আঘাত করা শুরু করেছে যার কারণে এই সকল জেলার উপরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া রাডার থেকে প্রাপ্ত চিত্রে।

ছবি: ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের কোলকাতা শহরে অবস্থিত রাডার থেকে প্রাপ্ত প্রতিফলিত রশ্মির মানচিত্র যা দেখে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ণয় করা হয় (সবুজ রং হালকা পরিমনে বৃষ্টি; হলুদ রং মাঝারি মানের বৃষ্টি ও লাল রং ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টিপাত নির্দেশ করে।)

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের কোলকাতা শহরে অবস্থিত রাডার থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর উপরে ঘন্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বাগে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার শুরু করেছে।

ছবি: ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের কোলকাতা শহরে অবস্থিত রাডার থেকে প্রাপ্ত বায়ুপ্রবাহের মান এর মানচিত্র যা দেখে বাতাসের গতিবেগ ও দিক নির্ণয় করা হয় (নীল রং রাডারের দিকে বাতাসের প্রবাহ ও হলুদ রং রাডার থেকে বাতাস দূরে সরে যাওয়ার দিক নির্দেশ করে।)

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল থেকে প্রাপ্ত এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) অনুসারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আজ ২৬ শে মে, ২০২৪ তারিখে তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা এবং বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। মাঝে-মাঝে হঠাৎ করে ঘন্টায় ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশংকাও নির্দেশ করতেছে বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। দমকা হাওয়ার গতিবেগ সর্বোচ্চ থাকতে পারে রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে সোমবার সকাল ৬ টার মধ্যে। 

ছবি বর্ণনা: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর ৫১ টি সম্ভব্য যাত্রাপথ ও বাতাসের গতিবেগের চিত্র। এই চিতটিকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) বলা হয়। 

বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন অংশের সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, ২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানির গভীরতা, উ-লম্ব বায়ু শিয়ারের মান, ভারত উপমহাদেশের উপর জেটষ্ট্রিমের অবস্থা ও চলার গতির তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাচ্ছে যে ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভব্য গতিপথ খুব বেশি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। স্থল ভাগে আঘাতের স্থানটি নিয়ে এখনও সামান্য পরিমাণ অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথের সর্বোচ্চ অনিশ্চয়তা ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ, ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার ডান দিকে কিংবা বাম দিকে যেতে পারে। সেই সাথে ঘূর্ণিঝড়টির উপকূলে আঘাতের সময় সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৬ ঘন্টার এগিয়ে আসতে পারে (যদি বর্তমান গতিবেগ অপেক্ষা দ্রুত গতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হয়) কিংবা দেরি হতে পারে (যদি বর্তমান গতিবেগ অপেক্ষা ধীর গতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হয়)।

Ensemble (সংকলন/পুঞ্জ/দলগত/সমষ্টিগত/) আবহাওয়া পূর্বাভাস কি?

Ensemble (সংকলন/পুঞ্জ/দলগত/সমষ্টিগত/) weather forecasting: বিজ্ঞানের বিভিন্ন মৌলিক সূত্রের গাণিতিক সমীকরণ (ভরের নিত্যতার সূত্র, শক্তির নিত্যতার সূত্র, ইত্যাদি) কম্পিউটার ব্যবহার করে সমাধান করে কোন স্থানের বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন দিনের সর্বোচ্চ/সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, বায়ুর আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, ইত্যাদি সম্বন্ধে সম্ভব্য একাধিক অবস্থার ভবিষ্যৎ মান (ভবিষ্যতের আবহাওয়ার সম্ভাবনার পরিসীমা (সর্বনিম্ন কি হতে পারে থেকে সর্বোচ্চ কি হতে পারে)) নির্ণয় করাকে এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) বলা হয়। আগ্রহী পাঠক যদি এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চান তবে নিচে সংযুক্ত নিবন্ধটি পড়ার আমন্ত্রণ জানাবো।

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা (পর্ব ২৪): Ensemble (সংকলন/সমষ্টিগত) আবহাওয়া পূর্বাভাস কি? 

প্রশ্ন: ঘূর্ণিঝড় রেমাল স্থল ভাগে আঘাতের সময় উপরে উল্লেখিত বাতাসের গতিবেগ সম্বন্ধে আমি আত্মবিশ্বাসী কি না?

উত্তর: ঘূর্ণিঝড় রেমাল যে তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে ঘণ্টায় প্রায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে দক্ষিন চব্বিশ পরগনা জেলা এবং বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করতে যাচ্ছে এই বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত Ensemble (সংকলন/সমষ্টিগত) আবহাওয়া পূর্বাভাসের উপর আমি পূর্ণ আস্থা রাখছি। এই ঘূর্ণিঝড়টি যে তীব্র ঘূর্ণিঝড় হবে সেই আশংকার কথা আমি মে মাসের শুরু থেকে প্রচারিত প্রত্যেকটি আপডেট এর মাধ্যমে বারংবার মনে করিয়ে দিয়েছি।

প্রশ্ন: ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে কত ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে?

ঘূর্ণিঝড় জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত করলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতা; ঘূর্ণিঝড় ভাটার সময় উপকূলে আঘাত করলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতায় প্লাবিত হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে।

প্রশ্ন: ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে দেশের কোন এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে?

সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, মাগুরা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, সিলেট, সুনামগন্জ, নেত্রকোনা, জেলার উপরে।

প্রশ্ন: ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে দেশের কোন বিভাগে কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হতে পারে?

ঘূর্ণিঝড়ের রেমালের কারণে বাংলাদেশের কোন বিভাগের উপরে কি পরিমাণে বৃষ্টি শুরু হতে পারে ২৫ থেকে ২৮ এ মে এর মধ্যে?

খুলনা বিভাগ: ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার
বরিশাল বিভাগ: ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার
ঢাকা বিভাগ: ২০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার [পদ্মা নদীর পশ্চিম পাশের জেলাগুলোর উপরে ২৫০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার ও ঢাকার উত্তর ও পূর্ব পাশের জেলাগুলোর উপরর ২০০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার]
চট্টগ্রাম বিভাগ: ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার
রাজশাহী বিভাগ: ২৫০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার
ময়মনিসংহ বিভাগ: ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার
সিলেট বিভাগ: ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার
রংপুর বিভাগ: ১৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটার  

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles