সোমবারের (এপ্রিল ২২, ২০২৪) আবহাওয়া পূর্বাভাস
তাপ-প্রবাহ পূর্বাভাস: দেশব্যাপী প্রাণঘাতী তাপ-প্রবাহের আশংকা
কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ ও আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো হতে প্রাপ্ত পূর্বাভাস তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আজ সোমবার দেশের ৭ টি বিভাগের উপর তাপ-প্রবাহ বিরাজ করার আশংকা করা যাচ্ছে। শুধুমাত্র সিলেট বিভাগের উপরে তাপপ্রবাহ তাপমাত্রা না উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৮ শে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপর চলমান তাপ-প্রবাহ অব্যাহত থাকার আশংকা করা যাচ্ছে।
আজ সোমবার, ২২ ই এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নিম্নরূপ উঠার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে:
১) ৪১ থেকে ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস: যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, পাবনা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
২) ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস: ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগন্জ, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট,নাটোর, পাবনা, নওগাঁ, বগুড়া, ময়মনসিংহ, নড়াইল, মাগুরা, পিরোজপুর, বরগুনা, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সিগন্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাগুরা, নড়াইল, ও রংপুর বিভাগের সকল জেলা।
৩) ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস: বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুর বি
৪) ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস: সিলেট বিভাগের সকল জেলা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জেলা
ছবি: আজ সোমবার সকাল ৮ টা বেজে ৩০ মিনিট সময়কার জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত দৃশ্যমান মানচিত্রে বাংলাদেশের সিলেট ও ময়মনিসংহ বিভাগের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর উপরে মাঝারি থেকে ভারি ঘনত্বের ও চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর আকাশে খুবই হালকা পরিমাণে মেঘের উপস্থিতি রয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর উপরে হালকা পরিমাণে মেঘের উপস্থিতি রয়েছে।
আজ সোমবার বিভাগ-ভিত্তিক বিস্তারিত পূর্বাভাস নিচে উল্লেখ করা হলও:
সিলেট বিভাগ: আজ সোমবার সকাল ৯ পর থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার মধ্যে সিলেট বিভাগের সকল জেলার উপর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার উপর দিয়ে একাধিকবার বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি সহ মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি অতিক্রম করার আশংকা করা যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা, ও সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার উপরে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার উপরে প্রবেশের সম্ভাবনা বেশি। আগামী ১০ দিন প্রায় প্রতি রাতেই সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর উপরে বজ্রপাত সহ হালকা পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে যার কারণে সিলেট বিভাগের হাওড় এলাকার বিলগুলো পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগ: আজ সোমবার দুপুর ১২ টার পর থেকে রাত ৩ টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়ি, উত্তর চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, কক্সবাজার জেলার কোন-কোন উপজেলার উপরে হালকা বজ্রপাত সহ হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টিপাতের অল্প কিছু সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাতের আশংকা অপেক্ষাকৃত বেশি উত্তর চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর উপরে। আজ সোমবার, চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর আকাশে হালকা পরিমাণে মেঘের উপস্থিতি থাকার কারণে দেশের অন্যান্য বিভাগ অপেক্ষা তাপ প্রবাহের প্রভাব কিছুটা কম অনুভূত হবে।
ঢাকা বিভাগ: আজ সোমবার সকাল ৯ টার পর থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার মধ্যে ঢাকা বিভাগের বেশিভাগ জেলার উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রম করা কিংবা বৃষ্টিপাত অতিক্রমের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে কিশোরগঞ্জ জেলার উপরে বিচ্ছিন্ন ভাবে খুবই স্বল্প সময়ের জন্য হালকা পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বিকেল ৫ টার পর থেকে রাত ৩ টার মধ্যে।
ময়মনিসংহ বিভাগ: আজ সোমবার দুপুর ১২ টার পর থেকে রাত ৩ টার মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনিসংহ জেলার কোন-কোন উপজেলার উপরে হালকা বজ্রপাত সহ সামান্য পরিমাণে বৃষ্টিপাতের কিছু সম্ভাবনা রয়েছ। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত বেশি নেত্রকোনা জেলার উপরে।
বরিশাল বিভাগ: আজ সোমবার সকাল ৯ টার পর থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার মধ্যে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রম করা কিংবা বৃষ্টিপাত অতিক্রমের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
রংপুর বিভাগ: আজ সোমবার সকাল ৯ টার পর থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার মধ্যে রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রম করা কিংবা বৃষ্টিপাত অতিক্রমের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
রাজশাহী বিভাগ: আজ সোমবার সকাল ৯ টার পর থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার মধ্যে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রম করা কিংবা বৃষ্টিপাত অতিক্রমের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
খুলনা বিভাগ: আজ সোমবার সকাল ৯ টার পর থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার মধ্যে খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রম করা কিংবা বৃষ্টিপাত অতিক্রমের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপরে বৃষ্টিপাত ও কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস
কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের চিত্র, আবহাওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন মানচিত্র ও আবহাওয়া মডেল থেকে প্রাপ্ত পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে আজ সোমবার পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমবঙ্গের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের ২/১ টি জেলার উপরে বিচ্ছিন্ন ভাবে খুবই স্বল্প সময়ের জন্য হালকা পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আজ সকাল ৮ টার সময়কার মেঘের চিত্র দেখা আশংকা করা যাচ্ছে যে আজও পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমবঙ্গের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর উপরে বিশেষ করে বান্কুরা, পুরুলিয়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি জেলার উপরে তীব্র তাপ-প্রবাহ বিরাজ করার আশংকা করা যাচ্ছে।
সিলেটের হাওর এলাকায় পাহাড়ি ঢলের আশংকা
দেশে চলমান তীব্র তাপ-প্রবাহের মধ্যেও সিলেট বিভাগের হাওড় এলাকায় পাহাড়ি ঢলের প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত পূর্বাভাস তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আগামী ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত
বাংলাদেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি ও খাসি হিল এলাকা, আসামের করিমগঞ্জ জেলা ও মনিপুর রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় প্রায় প্রতি দিন রাতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির প্রবল আশংকা। আগামী ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। উল্লেখিত পূর্বাভাস সঠিক হলে বৃষ্টিপাতের পুরো অংশ সিলেট বিভাগের নদ-নদীগুলো দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হাওর এলাকায় পৌঁছানোর আশংকা করা যাচ্ছে। ফলে সিলেট বিভাগের হাওড় এলাকার বিলগুলো পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার হাওড় এলাকার নিচু বিলগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে।
৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত দেশের অন্যান্য বিভাগের উপর বৃষ্টিপাত পূর্বাভাস
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আগামী ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর উপরে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুবই কম। ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত এই ৩ বিভাগের জেলাগুলোর উপরে সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০ মিলিমিটার অপেক্ষা কম হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে।
তাপ প্রবাহ কত প্রকার ও কি কি?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তাপ প্রবাহের সংজ্ঞায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর তাপ প্রবাহকে Heat Wave ও Severe Heat Wave নামে ২ প্রকারে ভাগ করলেও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর তাপ প্রবাহ কে ৪ ভাগে ভাগ করে থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে দেশের একটি বিশাল এলাকা জুড়ে নিম্নোক্ত অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বিরাজ করতে হবে মাত্র ২/৪ টি জেলায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে উঠলেই তাপ-প্রবাহ ঘোষণা করা যাবে না।
১) মৃদু তাপ প্রবাহ (তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) [স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি]
২) মধ্যম তাপ প্রবাহ (তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) [স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি]
৩) তীব্র তাপ প্রবাহ (তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস) [স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি]
৪) খুবই তীব্র তাপ প্রবাহ (তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস অপেক্ষা বেশি) [স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ডিগ্রী কিংবা সেলসিয়াস বা তা অপেক্ষা বেশি]
তীব্র তাপ প্রবাহ থেকে রক্ষার জন্য কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার?
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
উপরে উল্লেখিত বৃষ্টিপাত পূর্বাভাস সম্ভাবনা মাত্র। কোন স্থানে বৃষ্টিপাত আবহাওয়া সম্পর্কিত একাধিক শর্ত পূরণের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন বিভাগে বৃষ্টিপাত শুরুর সম্ভব্য সময় থেকে প্রকৃত বৃষ্টিপাত শুরুর সময় এর পার্থক্য ২ থেকে ৪ ঘন্টা পূর্বে বা পরে হতে পারে।
ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী
১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।
২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না।