শুক্রবারের (সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪) আবহাওয়া পূর্বাভাস: শুক্র ও শনিবার ৮ টি বিভাগেই বৃষ্টিপাতের আশংকা 

বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাবে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার দেশের সকল জেলার উপরে বৃষ্টি হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আজ শুক্রবার দুপুর ১ টা বেজে ৩০ মিনিটের পর থেকে আগামীকাল শনিবার সকাল ৮ টার মধ্যে চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলাগুলোর উপরে বজ্রপাত সহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টিপাতের আশংকা করা যাচ্ছে। একই সময়ের মধ্যে দেশের অন্যান্য বিভাগের জেলাগুলোর উপরে হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। 

বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে তা খুবই শক্তিশালি হয়েছে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতের পর থেকে আজ শুক্রবার দুপুর ১২ টার মধ্যে। শুধু তাই না, নিম্নচাপটি বিশাল আকার ধারণ করেছে। জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে নিম্নচাপটির আকার পুরো উত্তর বঙ্গোপসাগরের সমান, প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার। আগামীকাল শনিবার সকাল ৬ টার মধ্যে নিম্নচাপটি আরও শক্তি অর্জন করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে।

যেহেতু নিম্নচাপ কেন্দ্রে বায়ু ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরে তাই নিম্নচাপটির কারণে সৃষ্টি হওয়া বৃষ্টি-যুক্ত মেঘ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় আঘাত করে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আকাশে উঠে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর উপরে ভারি থেকে খুবই ভাবি বৃষ্টি ঘটানোর প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে আগামী ২ দিন। অর্থাৎ, আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার একনাগাড়ে ভারি থেকে খুবই ভাবি বৃষ্টি অব্যাহত থাকার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর উপরে। আজ ও আগামীকাল ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার।  

ছবি: জাপানের কৃত্রিম বহু-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত দৃশ্যমান মেঘের চিত্র (দুপুর ২ টা বেজে ২০ মিনিট)।

আজ শুক্রবার বিভাগ ভিত্তিক বৃষ্টিপাত পূর্বাভাস নিম্নরূপ:

চট্টগ্রাম বিভাগ: আজ শুক্রবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলার উপরে বিরতিহীন ভাবে হালকা বজ্রপাত সহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টা চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর উপরে নতুন করে ২০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভারি থেকে খুবই ভারি মানের বৃষ্টিপাতের আশংকা করা যাচ্ছে কক্সবাজার, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম, ও খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালী জেলার উপরে। ইতি মধ্যেই কক্সবাজার জেলায় পাহাড়ি ঢল শুরু হয়েছে। আশংকা করা যাচ্ছে আজ দিন শেষে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য জেলাগুলোর উপরে পাহাড়ি ঢলের। সেই সাথে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর উপরে ভূমি ধ্বসের প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে।

খুলনা বিভাগ: আজ শুক্রবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত খুলনা বিভাগের সকল জেলার উপরে বিরতিহীন ভাবে হালকা বজ্রপাত সহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টা খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত ভারি মানের বৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট জেলার উপরে।

বরিশাল বিভাগ: আজ শুক্রবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের সকল জেলার উপরে বিরতিহীন ভাবে হালকা বজ্রপাত সহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ১০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বরিশাল বিভাগের বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা জেলার উপরে।

ঢাকা বিভাগ: আজ শুক্রবার দুপুর ৩ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ৩ টার মধ্যে ঢাকা বিভাগের সকল জেলার উপরে হালকা বজ্রপাত সহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা বিভাগের পদ্মা নদীর পশ্চিম পাশের জেলাগুলোর উপরে ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। দুপুর ৩ টার পর থেকে বিকেল ৬ টার মধ্যে ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপলাগন্জ জেলার উপরে হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। সন্ধ্যা ৭ টার পর থেকে রাত ১২ টার মধ্যে ঢাকা বিভাগের উত্তরের জেলাগুলোর উপরে বৃষ্টিপাত শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।

ঢাকা শহরে বৃষ্টি শুরুর সম্ভাব্য সময় বিকেল ৬ টার পর থেকে রাত ১২ টা। আগামী ২৪ ঘন্টায় ঢাকা শহরের উপরে মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।

সিলেট বিভাগ: সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর উপরে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভব্য সময় বিকেল ৫ টা থেকে রাত ১০ টার মধ্যে। আজ রাতের সিলেট বিভাগে জেলাগুলোর উপরে মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার মেঘালয় সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর উপরে তীব্র বজ্রপাত সহ ভারি থেকে খুবই ভারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।

ময়মনসিংহ বিভাগ: আজ শুক্রবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ২ টার মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলার উপরে বজ্রপাত সহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আজ দুপুর ২ টার পর থেকে বিকেল ৫ টার মধ্যে নেত্রকোনা ও শেরপুর জেলার উপরে হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। বিকেল ৫ টার পর থেকে রাত ১২ টার মধ্যে ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার উপরে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজশাহী বিভাগ: আজ শুক্রবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ২ টার মধ্যে রাজশাহী বিভাগের সকল জেলার উপরে বজ্রপাত সহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আজ শুক্রবার দুপুর ১২ টার পর থেকে রাজশাহী জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে যার সন্ধ্যার মধ্যে রাজশাহী বিভাগের অন্যান্য জেলাগুলোর উপরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রংপুর বিভাগ: আজ শুক্রবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ২ টার মধ্যে রংপুর বিভাগের সকল জেলার উপরে বজ্রপাত সহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে আজ দুপুর ২ টার পরে রংপুর বিভাগের লালমতির হাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম জেলার উপরে বৃষ্টি শুরু হয়ে সেই বৃষ্টি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী জেলার উপরে বিস্তার লাভ করার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। 

ছবি: জাপানের কৃত্রিম বহু-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের শীর্ষের তাপমাত্রার চিত্র (দুপুর ২ টা বেজে ১৫ মিনিট)।যে স্হানের মেঘের তাপমাত্রা যত বেশি ঋনাত্নক সেই স্হানের মেঘের উচ্চতা তত বেশি ও সেই স্হানের মেঘ থেকে তত বেশি পরিমানে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। 

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যের উপরে বৃষ্টিপাত পূর্বাভাস

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য: আজ শুক্রবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ২ টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সকল জেলার উপরে বজ্রপাত সহ হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে দুপুর ২ টার পর থেকে রাত ১২ টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের সকল জেলার উপরে ভারি থেকে খুবই ভারি মানের বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বিকেল ৪ টার পর থেকে রাত ১২ টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাণাঞ্চলের উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, আলিপুর-দুয়ার, দার্জিলিং জেলার উপরে হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টির সম্মান্য কিছু সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

ত্রিপুরা রাজ্য: আজ শুক্রবার দুপুর ৩ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ৩ টার মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যের সকল জেলার উপরে বজ্রপাত সহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।  

আসাম রাজ্য: আজ শুক্রবার দুপুর ৩ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ৩ টার মধ্যে আসাম রাজ্যের পূর্ব দিকের ৩ টি জেলার (করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, কাছার) উপরে মাঝার থেকে ভারি মানের বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। 

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর জন্য জীবন-রক্ষাকারী জরুরী বন্যা ও ভূমিধ্বস পূর্বাভাস

সংবাদে প্রকাশ বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টার পর থেকে শুরু করে শুক্রবার সকাল ৯ টার মধ্যে ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজার জেলায় ৪০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২ দিন কক্সবাজার জেলার উপরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে আগামী ২ দিনে কক্সবাজার জেলায় আরও কমপক্ষে ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির আশংকার করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি ঢল ও বন্যা শুরু হয়েছে। আশংকা করা যাচ্ছে আগামী ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে ও ভূমিধ্বসের প্রবল ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। 

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনূর্ধ্ব জানাচ্ছি পাহাড়ের ঢালে কিংবা পাহাড় চুড়ায় বসবাসর করা মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিরে নেওয়ার জন্য।