শনিবারের (নভেম্বর ২৫, ২০২৩) বৃষ্টিপাত ও কুয়াশা পূর্বাভাস এবং এ সপ্তাহের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা

বঙ্গোপসাগরে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় আপডেট ৪, নভেম্বর ২৫, ২০২৩

আজ ২৫ ই নভেম্বর, শনিবার, দুপুর ২ টার সময় জাপান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত দৃশ্যমান চিত্র (visible imagery) বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের আকাশের উপরে মেঘ প্রায় পুরোপুরি অনুপস্থিতি। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মেঘ মুক্ত আকাশ বিরাজ করলে তা ভূ-পৃষ্ঠের কাছা-কাছি স্থানে বায়ুর উচ্চচাপ ও বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে বায়ুর নিম্নচাপ অবস্থা নির্দেশ করে। আজ সকাল ৯ টার সময় ঢাকা বিমান বন্ধরে বায়ুচাপ পরিমাণ করা হয়েছে ১০১৮ মিলিবার। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনে শহরের উপরে বায়ুচাপ ছিলও ১০১৫ মিলিবার ও কোলকাতা শহরের উপরে বায়ুচাপ ছিলও ১০১৮ মিলিবার। বায়ু চাপের এই মান নির্দেশ করতেছে যে ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপরে উচ্চ বায়ুচাপের উপস্থিতি। এখানে উল্লেখ্য যে স্বাভাবিক অবস্থায় ভূমির কাছা-কাছি স্থানে বায়ুর নিম্নচাপ ও উপরের দিকে বায়ুর উদ্ধচাপ অবস্থা বিরাজ করে। বায়ু সাধারণত উচ্চ-চাপ অবস্থা থেকে নিম্নচাপ অবস্থায় গমন করে। ভূ-পৃষ্ঠের কাছা-কাছি স্থানে বায়ুর উচ্চ-চাপ অবস্থা বিরাজ করলে সেই স্থানে মেঘের সৃষ্টি বাধাপ্রাপ্ত হয়। আজ শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কোন জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

ছবি: জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত (দুপুর ২ টা) মেঘের চিত্র বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উপর

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত আবহাওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আজ শনিবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল রবিবার দুপুর ২ টার মধ্যে বাংলাদেশের অন্য কোন জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

৩ দিনের বৃষ্টিপাত পূর্বাভাস (নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত)

আজ শনিবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত আবহাওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রবিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত কুয়াশা পূর্বাভাস

আজ শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে আগামীকাল রবিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত মাঝারি থেকে বেশি ঘনত্বের কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের একাধিক জেলার উপরে। অপেক্ষাকৃত বেশি কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাক্ষমণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ টি জেলা, ফরিদপুর, মাদারীপুর জেলার উপরে।

পশ্চিমবঙ্গের উপর বৃষ্টিপাত ও কুয়াশার পূর্বাভাস

আজ শনিবার দুপুর ১ টার পর থেকে আগামীকাল রবিবার দুপুর ১ টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোর উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

আজ শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে আগামীকাল রবিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ঘনত্বের কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উপরে। 

বঙ্গোপসাগরে আবারও একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে ২৭ শে নভেম্বর থেকে ৪ ই ডিসেম্বরের মধ্যে

বিশ্বের প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো আগামী ২৭ ই নভেম্বর থেকে ২৯ শে নভেম্বর এর মধ্যে ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের আশ-পাশে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে।

আজ ২৫ শে নভেম্বর আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের আশ-পাশে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা প্রায় ২৯ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বিরাজ করছে। সেই সাথে আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের আশ-পাশে বায়ু শিয়ারের মান ৫ থেকে ১৫ এর মধ্যে রয়েছে। একটি পশ্চিমা লঘুচাপ আজ ২৫ শে নভেম্বর ইরানে উপর অবস্থান করছে ও এই সপ্তাহের শেষের দিকে ভারত ও বাংলাদেশের উপরে অবস্থান করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

মেসন-জুলিয়ান দোলন নামক আবহাওয়া সম্পর্কিত একটি প্রক্রিয়া আজ ২৫ শে নভেম্বর দক্ষিণ আরব সাগরের উপরে অবস্থান করতেছে (২ নম্বর দশায়)। একই সময় ভারত মহাসাগরীয় দ্বিমেরু এর ধনাত্মক দশা চলতেছে।

উপরে উল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয়ই লঘুচাপকে পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করা ও শক্তিশালি করায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। ঠিক এই কারণগুলোর জন্যই আশংকা করা হচ্ছে যে আগামী আগামী ২৭ ই নভেম্বর থেকে ২৯ শে নভেম্বর এর মধ্যে ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের আশ-পাশে যে লঘুচাপটি সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে তাকে পুর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করতে পারে।

সম্ভব্য লঘু চাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২৯ থেকে ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে ও ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখের মধ্যে গভীর নিম্নচাপ ও ডিসেম্বর মাসের ২ থেকে ৩ তারিখে পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ডিসেম্বর মাসের ৩ থেকে ৪ তারিখের মধ্যে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল একদম শুরু থেকেই পূর্বাভাস করতেছে যে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলো ও মায়ানমারের রাখাই রাজ্যের মধ্যবর্তী কোন এলাকার উপরে দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

পক্ষান্তরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল অনুসারে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ কিংবা ওড়িশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত করতে পারে। উল্লেখিত ২ টি মডেলই পূর্বাভাস করতেছে যে ২৮ শে নভেম্বর লঘুচাপটি সৃষ্টি হতে পারে। তবে ২ টি মডেল ভিন্ন-ভিন্ন স্থানে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করার প্রধান কারণ হলও দুইটি মডেল সাব-ট্রপিকাল জেট-স্ট্রিমের অবস্থান ভারত ও বাংলাদেশের আকাশের ভিন্ন-ভিন্ন স্থানে উপস্থিতি নির্দেশ করতেছে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি কোন স্থানের উপকূলে আঘাত করতে পারে সে সম্বন্ধে নিশ্চিত করে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে সম্ভাবনা কিছুটা বেশি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানার।

সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির ক্ষতিকর প্রভাব সর্বনিম্ন পরিমাণে নামিয়ে আনতে দরকার পূর্ব-প্রস্তুতি

কৃষকদের জন্য পরামর্শ

সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলার কৃষকদের অনূর্ধ্ব করবো যে জমিতে পাকা ধান থাকলে তা কেটে মড়াই করাে জন্য। শীতকালীন শাক-সবজির জমিত যেন ঘূর্ণিঝড়ের সময় যেন পানি জমে শস্যের ক্ষতি না করে।

সমুদ্র-গামী জেলেদের জন্য পূর্বাভাস

সম্ভাবনা খুবই বেশি আগামী সপ্তাহের সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যের উপকূলে আঘাত করার। সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেরা যেন অবশ্যই ২৮ শে নভেম্বরের মধ্যে উপকূলে ফেরত চলে আসার প্রস্তুতি নিয়ে রাখে; কিংবা সেই হিসাব করেই সমুদ্রে যাত্রা করে যে জেলেরা এই সপ্তাহে সমুদ্রে যাত্রা করার পরিকল্পনা করেছেন।

ঘূর্ণিঝড়কে শক্তিশালি হতে সাহায্য করে এই রকম আবহাওয়া সম্পর্কিত অনেক সূচকই অনুকূলে রয়েছে বা থাকবে আগামী সপ্তাহে; তাই আশংকা করা হচ্ছে যে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি সর্বশেষ ২ টি ঘূর্ণিঝড় (হামান ও মিধিলি) অপেক্ষা বেশি শক্তিশালি হতে পারে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ-গামী পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা

৩০ শে নভেম্বরের পর থেকে ডিসেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত টেকনাফ-টু-সেন্টমার্টীন নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে পর্যটকরা সেন্টমার্টীন দ্বীপ ত্যাগ না করলে আটকা পড়ার সম্ভাবনা। 

 

 

 

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles