বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর পূর্বাভাস (আপডেট ৭, রবিবার ১৯ ই মে, ২০২৪)

আবহাওয়া ডট কম গত ২ সপ্তাহ থেকে পূর্বাভাস দিয়ে আসছে যে আগামী ২১ শে মে থেকে ২৩ শে মে এর মধ্যে ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘু চাপ সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আজ ১৯ শে মে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস জারি করেছে যে আগামী ২২ শে মে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি লঘু চাপ সৃষ্টি হতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে যে লঘু চাপ সৃষ্টির পরে তা শুরুতে উত্তর দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ শে মে লঘুচালটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করেছে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে।

আজ ১৯ শে মে, ২০২৪ তারিখে আমেরিকার গ্লোবাল পথকষ্ট সিস্টেম মডেল, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল, অস্ট্রেলিয়া, ও যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের সবগুলোই বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। এখানে উল্লেখ্য যে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল একই সাথে সমুদ্রের কোন স্থানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিলে সেই ঘুর্নঝড়টি সৃষ্টি সম্বন্ধে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যায়। ফলে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ % নিশ্চয়তা সহকারে বলা যায় যে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে রেমাল। এই নামটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের দেওয়া। 

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর আঘাতের সম্ভব্য স্থান ও ঐ স্থানে আঘাতের সম্ভবতার পরিমাণ।

আগামী ২২ শে মে লঘুচাপ সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। লঘুচাপটি ২৩ শে মে নিম্নচাপে ও ২৪ শে মে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ অবস্থা থেকে আরও শক্তিশালি হয়ে আগামী ২৫ শে মে পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। তারিখের স্থান হলও আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের পশ্চিম অংশের দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপরে।

এখানে উল্লেখ্য যে গত ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রথমে আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম বা Global Forecast System (GFS) নামক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করলেও ঘূর্ণিঝড়ের স্থল ভাগে আঘাতের স্থান ও সময় বিষয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সঠিক পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্টিং সিস্টেম নামক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বা ECMWF Integrated Forecasting System (IFS)।

ঘূর্ণিঝড়ের উপকূলে আঘাতের সম্ভব্য স্থান

যেহেতু সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল স্থল ভাগে আঘাতের মাত্র ৭ দিন অবশিষ্ট রয়েছে তাই আজ ১৯ শে মে, ২০২৪ তারিখে প্রাপ্ত পূর্বাভাস তথ্য বিশ্লেষণ করে আশংকা করা যাচ্ছে যে ঘুর্নিঝত রেমাল ভারতের ওড়িশা রাজ্য ও বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ % নিশ্চয়তা সহকারে বলা যায়। তবে ভারতীয় উপ মহাদেশের উপরে সাব-ট্রপিকাল জেটস্ট্রিমের পূর্ব দিকে চলার গতিবেগ বর্তমান অবস্থা থেকে মাত্র ৫ থেকে ১০% বৃদ্ধি পেলে ঘূর্ণিঝড় রেমাল সরাসরি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করবে।

ঘূর্ণিঝড়ের উপকূলে আঘাতের সম্ভব্য সময়

ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের অগ্রভাগ ২৫ শে মে সকাল ৬ টার পর থেকে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলে আঘাত করা শুরু করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে অতিক্রমের সম্ভব্য সময় ২৫ শে মে সন্ধ্যার পর থেকে মধ্য রাত এর মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের পিছনের অর্ধেক অংশ স্থল ভাগ অতিক্রম করার সম্ভব্য সময় ২৫ শে মে দিবাগত মধ্য রাতের পর থেকে ২৬ শে মে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে।

ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভব্য ক্ষতিকর প্রভাব উপকূলীয় এলাকায়

সর্বশেষ পূর্বাভাস তথ্য বিশ্লেষণ করা আশংকা করা যাচ্ছে যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সৃষ্ট সবচেয়ে শক্তিশালি বায়ু বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলোর উপর দিয়ে অতিক্রম করার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। অধিকন্তু ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু পূর্ণিমা রাতের মাত্র ২ দিন পরে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।

আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল মে মাসের ২৫ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে উপকূলে আঘাত করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে বাংলাদেশে উপরে বৃষ্টিপাত শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে ২৪ শে মে থেকে যা ২৮ শে মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের উপর মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ২৫, ২৬ ও ২৭ শে মে। অপেক্ষাকৃত হালকা পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে মে মাসের ২৪ ও ২৮ তারিখে। মে মাসের ২৩ তারিখ থেকেই সমুদ্র উত্তাল হওয়া শুরু প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির ক্ষতিকর প্রভাব সর্বনিম্ন পরিমাণে নামিয়ে আনতে দরকার পূর্ব-প্রস্তুতি

কৃষকদের জন্য পরামর্শ

সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশের বেশিভাগ জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে। ফলে বাংলাদেশের কৃষকদের অনুরোধ করবো প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিয়ে রাখার জন্য। জমিতে পাকা ধান থাকলে তা কেটে মড়াই করাে জন্য। শাক-সবজির জমিত যেন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জামা হওয়া বৃষ্টির পানি জমে শস্যের ক্ষতি না করে।

সমুদ্র-গামী জেলেদের জন্য পূর্বাভাস

সম্ভাবনা খুবই বেশি মে মাসের ২২ তারিখ থেকে সমুদ্র উত্তাল হওয়া। সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেরা যেন অবশ্যই মে মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে উপকূলে ফেরত চলে আসে। মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে সমুদ্রে অবস্থান করা কোন ভাবে নিরাপদ হবে না। মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত সমুদ্র খুবই ভয়ংকর অবস্থায় থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্র ট্রলার ডুবে প্রানহানী এড়াতে মে মাসের ২০ তারিখের পর থেকে নতুন করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

লবণ চাষিদের জন্য পরামর্শ

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার লবনচাষিদের জানানো যাচ্ছে যে মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে তা মে মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মাঠে থাকা লবণ মে মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে তুলে ফেলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ-গামী পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা 

মে মাসের ২৪ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত টেকনাফ-টু-সেন্টমার্টীন নৌ-পথে সমুদ্র প্রচণ্ড উত্তাল থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই সেন্টমার্টীন দ্বীপের ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের ২৪ তারিখের পূর্বে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

উপকূলীয় মৎসচাষীদের জন্য পরামর্শ

সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রবল প্রভাব পড়ার আশংকা করা যাচ্ছে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকার উপরে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রোমাল ভরা-পূর্ণিমার ১ বা ২ দিন পরে উপকুলে আঘাত করার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশংকা করা যাচ্ছে। মৎসচাষীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিয়ে রাখার পরামর্শ রইলো। 

নিচে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর স্থল ভাগে আঘাতের সম্ভব্য স্থান ও সময় এর চিত্র যোগ করা হলও। 

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি মে মাসের ২৫ তারিখ সকালের পর থেকে ২৬ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের মধ্যবর্তী উপকূলের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। (১৮ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)। 

ছবি: কানাডার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে সাম্ভব্য ঘুর্নিঝড় রেমাল মে মাসের ২৫ তারিখ সকাল ৬ টার পর থেকে ২৭ তারিখ দুপুর ১২ টার মধ্যে সরাসরি বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মধ্যবর্তী উপকূলের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। (১৮ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)। 


ছবি: জার্মানির আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে সাম্ভব্য ঘুর্নিঝড় রেমাল মে মাসের ২৬ তারিখ সন্ধার পর থেকে ২৭ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের মধ্যবর্তী উপকূলের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। (১৮ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)। 


ছবি: আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ শে মে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকুলে আঘাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে (১৮ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)।   

ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী

 ১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্‌কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।

২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না। 

About the Author

Mostofa Kamal Palash

Founder & Lead Meteorologist

Mostofa Kamal Palash is pursuing his Ph.D. in the School of Environment and Sustainability at the University of Saskatchewan, Saskatoon, Canada. Mostofa obtained his MSc from the department of Earth and Environmental Sciences at the University of Waterloo, Waterloo, Ontario, Canada. Mostofa’s MSc Thesis title was “A Comprehensive Sensitivity Analysis of the Weather Research and Forecasting (WRF) Modeling System over Southern Ontario, Canada”. Mostofa completed a Post Graduate Diploma in Earth System Physics from the Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics (ICTP), Trieste, Italy. His diploma thesis title was "Climate Sensitivity of Land-Use Change over South Asia Using the RegCM3 Modeling System." Mostofa also obtained an MSc in Physics from Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Bangladesh. His MSc thesis title was "Seasonal Variation of Sensible and Latent Heat Flux Tendency in Bangladesh." Lastly, Mostofa completed his Bachelor of Science in Physics from (SUST), Bangladesh.

View All Articles