বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় “তেজ” সৃষ্টির হয়েছে (আপডেট: ৫, অক্টোবর ২২, ২০২৩)
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘু চাপটি গত ২৪ ঘন্টায় শক্তিশালি হয়ে আজ রবিবার নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় আব হাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে আজ সকাল ৯ টার সময় নিম্নচাপটির অবস্থা ছিলও প্রায় ১৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৬ দশমিক ২ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপরে। নিম্নচাপের কেন্দ্র ভারতের পশ্চিম বঙ্গের দিঘা নামক স্থান থেকে প্রায় ৭৪০ কিলোমিটার ও বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার খেপুপাড়া উপজেলা (পায়রা সমুদ্র বন্দর) থেকে প্রায় ৮৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। নিম্নচাপটি আগামীকাল সোমবার সকালের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সামান্য কিছু সম্ভাবনা রয়েছে নিম্নচাপটি সমুদ্রে থাকা অবস্থায় গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরনিত হওয়ার। গভীর নিম্নচাপটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় তবে এর নাম হবে “হামুন”। গভীর নিম্নচাপটি আগামী বুধবার (২৫ শে অক্টোবর) দুপুরের পর থেকে বৃহঃপতিবার (২৬ শে অক্টোবর) দুপুরের মধ্যে সরাসরি বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝা-মাঝি এলাকার উপকূলের উপর দিয়ে স্থল ভাগ অতিক্রম করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
ছবি: আজ ২২ শে অক্টোবর দক্ষিন-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো হতে প্রাপ্ত পূর্বাভাস অনুসারে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি আগামীকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ভিশাখাপত্তম সমুদ্র বন্দরের দিকে (উত্তর-পশ্চিমে) অগ্রসর হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী সোমবার দুপুরের পর থেকে গভীর নিম্নচাপটি ওড়িশা রাজ্যের উপকূল ঘেঁষে পুরোপুরি উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করতেছে যে গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করতে যাচ্ছে সরাসরি।
ছবি: (ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর): আরব সগরে সৃষ্টি হওয়া ঘুর্নিঝড় তেজ ও বঙ্গপোসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচপা এর সাম্ভব্য যাত্রাপথ ও উপকূলে আঘাতের সাম্ভাব্য স্হান।
এখানে উল্লেখ্য যে ২০২২ সালে ২৪ শে অক্টোবর বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলের উপর দিয়ে স্থল ভাগ অতিক্রম করেছিল ঘূর্ণিঝড় সিতরাং। এই সপ্তাহের গভীর নিম্নচাপটি (যা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার কিছু সম্ভাবনা রয়েছে) প্রায় একই সময়ে ও কাছাকাছি স্থানের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করতে যাচ্ছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলোর হতে প্রাপ্ত আজ ২২ শে অক্টোবরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে:
বাংলাদেশের উপকূলে আঘাতের সম্ভাব্য সময়: ২৫ শে অক্টোবর সকাল ৬ টার পর থেকে ২৬ শে অক্টোবর ভোর ৬ টার মধ্যে।
বাতাসের সম্ভব্য গড় গতিবেগ: ঘন্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার
বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ (দমকা হাওয়া): ঘন্টা ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার
জলোচ্ছ্বাসের সম্ভব্য উচ্চতা: স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৭ ফুট বেশি
বৃষ্টিপাতের সম্ভব্য পরিমাণ (২৩ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত): বরিশাল ও খুলনা ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার; চট্টগ্রাম, ও সিলেট ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার; ঢাকা, ময়মনিসংহ ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার; রাজশাহী, রংপুর বিভাগ ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার।
সর্বোচ্চ পরিমাণের বৃষ্টিপাতের ঝুঁকিপূর্ণ জেলা: বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ব্রাক্ষমণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ও কিশোরগঞ্জ জেলা।
এখানে উল্লেখ যে ২৯ শে অক্টোবর পূর্ণিমা রাত। অর্থাৎ, গভীর নিম্নচাপটি বা সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ণিমা রাতের মাত্র ৩ দিন পূর্বে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে নিম্নচাপটি বা সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির কারণে বাতাসের গতিবেগ অপেক্ষাকৃত কম থাকলেও জলোচ্ছাসের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৭ ফুট বেশি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
ছবি বর্ণনা: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় হামুন এর ৫১ টি সম্ভব্য যাত্রাপথ ও বাতাসের গতিবেগের চিত্র। এই চিতটিকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) বলা হয়।
ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেলের (ECMWF Integrated Forecasting System) পূর্বাভাস অনুসারে সাম্ভব্য লঘুচাপ টির কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের উপরে সাম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান।
ছবি: কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে তোলা ঘুর্নিঝড় তেজ এর কারণে সৃষ্টি হওয়া ঘুর্নয়মান মেঘের ছবি। (ছবি সুত্র: আমেরিকার নৌবাহিনী কতৃপ পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার)
ছবি: ঘুর্নিঝড় তেজ এর সাম্ভব্য যাত্রাপথ। (ছবি সুত্র: আমেরিকার নৌবাহিনী কতৃপ পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার)
ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী
১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।
২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না।