সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর আপডেট ১৩ (২৫ শে মে, রাত ৩ টা, ২০২৪): নিম্নচাপটি বর্তমানে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে
দক্ষিণ মধ্য-বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত নিম্নচাপটি আজ শুক্রবার দিবাগত রাত ১২ টার পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ও রাত ১ টা বেজে ৩০ মিনিটের সময় জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্র বর্তমানে ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯ দশমিক ৪ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপরে অবস্থান করতেছে। গভীর নিম্নচাপটি বর্তমান খুবই আগ্রাসী ভাবে শক্তিশালি ও সংগঠিত হচ্ছে কারণ বর্তমানে যে স্থানে অস্থান করতেছে সেই স্থানে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩১ ডিগ্রী সেলসিয়াস যা গভীর নিম্নচাপটিকে শক্তি যোগাচ্ছে শক্তিশালি হওয়ার জন্য। একই সাথে এই স্থানে ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানির গভীরতা ১০০ মিটারের বেশি। ফলে আশংকা করা যাচ্ছে যে আগামীকাল সকাল ৯ টার পূর্বেই গভীর নিম্নচাপটি পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার।
গভীর নিম্নচাপটি পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল ও ঘন্টায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল কোন দিন ও কোন সময়ে উপকূলে আঘাত করতে পারে?
যেহেতু গভীর নিম্নচাপটি খুবই ধীর গতিতে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে তাই উপকূলে আঘাতের সময় পূর্বের পূর্বাভাসে উল্লেখিত সময় থেকে ৩ থেকে ৬ ঘন্টা লেট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় রেমালের অগ্রবর্তী অংশ রবিবার সকাল বেলার পরিবর্তে দুপুর ১২ টার পর থেকে উপকূল অতিক্রম করা শুরু করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র রবিবার সন্ধ্যা ৬ টার পর থেকে সোমবার ভোর ৬ টার মধ্যে ও ঘুর্নঝড় বৃত্তের পিছনের অর্ধেক অংশ সোমবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ঘূর্ণিঝড়টি যদি হঠাৎ করে দ্রুত চলা শুরু করে যেমন করেছিল ঘূর্ণিঝড় সিতরাং ও হামুনের সময়, সেই ক্ষেত্রে হয়ত পূর্বের পূর্বাভাসে উল্লেখিত সময় অনুসারেই ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত করা শুরু করতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করা শুরু করাকে ঘূর্ণিঝড় স্থল ভাগে আঘাত করা হিসাবে গণ্য করে থাকে। ফলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুসারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলে আঘাত করা শুরুর সম্ভব্য সময় রবিবার মধ্যরাতের পর থেকে।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল গতি পথ পরিবর্তন করে কি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের পরিবর্তে অন্য স্থানে আঘাত করতে পারে?
ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত ২ দিন পূর্বের পূর্বাভাসে অনিশ্চয়তা থাকে মাত্র ১০ থেকে ২০%। সেই ক্ষেত্রে মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায় যে ঘূর্ণিঝড় রেমালভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুর জেলা এবং বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার আশংকা ৮০ থেকে ৯০ %। অর্থাৎ, আগামী ৩৬ ঘন্টায় ঘূর্ণিঝড়টি যদি সামান্য পরিমাণে বামে কিংবা ডানে সরে যায় তার পরেও ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে শক্তিশালি অংশ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়েই উপকূলে আঘাত করার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।
কোন সময়ের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিলে প্রানহানী কিংবা ক্ষতির ঝুঁকি সর্বনিম্ন পরিমাণে থাকবে?
বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস যদিও নির্দেশ করতেছে যে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল রবিবার সকালের পর থে উপকূলে আঘাত করার শুরু করার সম্ভাবনা। তবে ঘূর্ণিঝড় হঠাৎ করে গতি বৃদ্ধি করে ৩ থেকে ৬ ঘন্টা পূর্বেই উপকূলে আঘাত করতে পারে যেহেতু আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই ঘূর্ণিঝড়টি সোজা উত্তর দিয়ে অগ্রর হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করতে প্রায় সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। ফলে আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষদের আগামীকাল শনিবারই আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে যেহেতু রবিবার সকাল থেকে পুরো দমে বৃষ্টি পরা শুরু করবে। রবিবার দুপুরের মধ্যে অবশ্যই সকল মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের রেমালের কারণে বাংলাদেশের কোন বিভাগের উপরে কি পরিমাণে বৃষ্টি শুরু হতে পারে ২৪ থেকে ২৮ এ মে এর মধ্যে?
খুলনা বিভাগ: ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার
বরিশাল বিভাগ: ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার
ঢাকা বিভাগ: ২০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার [পদ্মা নদীর পশ্চিম পাশের জেলাগুলোর উপরে ২৫০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার ও ঢাকার উত্তর ও পূর্ব পাশের জেলাগুলোর উপরর ২০০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার]
চট্টগ্রাম বিভাগ: ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার
রাজশাহী বিভাগ: ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার
ময়মনিসংহ বিভাগ: ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার
সিলেট বিভাগ: ১৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটার
রংপুর বিভাগ: ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার
ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহারের শর্তাবলী
১) এই ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত কোন তথ্য কোন প্রকাশনায় (যেমন, সংবাদ পত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক, ব্লগ) ব্যবহার করলে আবহাওয়া ডট কম ওয়েবসাইটের নাম কিংবা মোস্তফা কামাল পলাশ (আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক, সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সাসকাটুন, কানাডা) এর নাম তথ্য সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা আবশ্যক।
২) এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস বেসরকারি তথ্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীতি নির্ধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওয়বেসাইটের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি দায়ী থাকিবে না।