বৃহঃপতিবারের (নভেম্বর ২৩, ২০২৩) বৃষ্টিপাত ও কুয়াশা পূর্বাভাস এবং এ সপ্তাহের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা
বঙ্গোপসাগরে সাম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় আপডেট ২, নভেম্বর ২৩, ২০২৩
আজ ২৩ ই নভেম্বর, বৃহঃপতিবার, দুপুর ১২ টার সময় জাপান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত দৃশ্যমান চিত্র (visible imagery) বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের আকাশের উপরে মেঘ প্রায় পুরোপুরি অনুপস্থিতি। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মেঘ মুক্ত আকাশ বিরাজ করলে তা ভূ-পৃষ্ঠের কাছা-কাছি স্থানে বায়ুর উচ্চচাপ ও বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে বায়ুর নিম্নচপা অবস্থা নির্দেশ করে। স্বাভাবিক অবস্থায় ভূমির কাছা-কাছি স্থানে বায়ুর নিম্নচপা ও উপরের দিকে বায়ুর উদ্ধচাপ অবস্থা বিরাজ করে। বায়ু সাধারণত উচ্চ-চাপ অবস্থা থেকে নিম্নচাপ অবস্থায় গমন করে। ভূ-পৃষ্ঠের কাছা-কাছি স্থানে বায়ুর উচ্চ-চাপ অবস্থা বিরাজ করলে সেই স্হানে মেঘের সৃষ্টি বাধাপ্রাপ্ত হয়। আজ বৃহঃপতি বার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কোন জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
ছবি: জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত (দুপুর ১২ টা বেজে ২০ মিনিট) মেঘের চিত্র বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উপর
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত আবহাওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আজ বৃহঃপতিবার দুপুর ১২ টার পর থেকে আগামীকাল শুক্রবার দুপুর ১২ টার মধ্যে বাংলাদেশের অন্য কোন জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
৩ দিনের বৃষ্টিপাত পূর্বাভাস (নভেম্বর মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত)
আজ বৃহঃপতিবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড পথকষ্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত আবহাওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আগামী রবিবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
বৃহঃপতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কুয়াশা পূর্বাভাস
আজ বৃহঃপতিবার মধ্যরাতের পর থেকে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত মাঝারি থেকে বেশি ঘনত্বের কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের একাধিক জেলার উপরে। অপেক্ষাকৃত বেশি কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ টি জেলা, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, জয়পুরহাট, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও উপরে।
পশ্চিমবঙ্গের উপর বৃষ্টিপাত ও কুয়াশার পূর্বাভাস
আজ বৃহঃপতিবার দুপুর ১২ টার পর থেকে আগামীকাল শুক্রবার দুপুর ১২ টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোর উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
আজ বৃহঃপতিবার মধ্যরাতের পর থেকে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত মাঝারি থেকে বেশি ঘনত্বের কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, ও বর্ধমান জেলার উপরে।
বঙ্গোপসাগরে আবারও একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে ২৬ শে নভেম্বর থেকে ৩ ই ডিসেম্বরের মধ্যে
বিশ্বের প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো আগামী ২৫ ই নভেম্বর থেকে ২৮ শে নভেম্বর এর মধ্যে ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের আশ-পাশে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে সকল। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ও ভারতীয় উপ মহাদেশের উপর সাব-ট্রপিকাল জেট স্ট্রীমের অবস্থান এর প্রভাবে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে ২৯ শে নভেম্বর এর মধ্যে গভীর নিম্নচাপ; ও ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ে ডিসেম্বর মাসের ১ থেকে ২ তারিখের মধ্যে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলো।
ছবি: আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল অনুসারে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকার ভোলা-নোয়াখালী-চট্টগ্রাম) উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করতে পারে।
কৃষকদের জন্য পরামর্শ
সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলার কৃষকদের অনুরোধ করবো যে জমিতে পাকা ধান থাকলে তা কেটে মড়াই করাে জন্য। শীতকালীন শাক-সবজির জমিত যেন ঘূর্ণিঝড়ের সময় যেন পানি জমে শস্যের ক্ষতি না করে।
সমুদ্র-গামী জেলেদের জন্য পূর্বাভাস
সম্ভাবনা খুবই বেশি আগামী সপ্তাহের সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যের উপকূলে আঘাত করার। দ্বীপের জেলেরা যেন অবশ্যই ২৮ শে ডিসেম্বরের মধ্যে উপকূলে ফেরত চলে আসার প্রস্তুতি নিয়ে রাখে; কিংবা সেই হিসাব করেই সমুদ্রে যাত্রা করে যে জেলেরা এই সপ্তাহে সমুদ্রে যাত্রা করার পরিকল্পনা করেছে।
আগামী সপ্তাহের সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি সর্বশেষ ২ টি ঘূর্ণিঝড় (হামুন ও মিধিলি) অপেক্ষা বেশি শক্তিশালি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ-গামী পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা
২৮ শে নভেম্বরের পর থেকে ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত টেকনাফ-টু-সেন্টমার্টীন নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ২৮ শে নভেম্বরের মধ্যে পর্যটকরা সেন্টমার্টীন দ্বীপ ত্যাগ না করলে আটকা পড়ার সম্ভাবনা।
