বঙ্গোপসাগরে লঘু চাপ সৃষ্টির প্রবল আশংকা: চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য বৃষ্টিপাত সতর্কতা
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি লঘু চাপ সৃষ্টির প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এখানে উল্লেখ্য যে সম্ভব্য এই লঘুচাপটি ঘুর্নিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। তবে যদি ঘুর্নিঝড়ে পরিনত হয় তবে এটি মৃদু ঘুর্নিঝড়ে ঝড়ে পরিনত হতে পারে। সাম্ভব্য এই লঘুচাপটি আগামী ১০ ও ১১ ই এপ্রিল বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলা ও মায়ায়ামনারের রাখাইন রাজ্যের উপর দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করার আশংকা করা যাচ্ছে। ফলে আগামী ১০ ও ১১ ই এপ্রিল বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলা ও মায়ায়ামনারের রাখাইন রাজ্যের উপর মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে কক্সবাজার ও বান্দরবন জেলার উপরে ১০ ও ১১ ই এপ্রিল ২ দিনে ৫০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে।
ছবি: জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের উপস্থিতি ও মেঘের শীর্ষের তাপমাত্রার চিত্র (৮ ই এপ্রিল বাংলাদেশ সময় সকাল ৮ টার সময় তোলা)।
ছবি ২: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে সম্ভাব্য লঘুচাপ/ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ ও শক্তির পূর্বাভাস।
🌪️ ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাসের মানচিত্র ব্যাখ্যা (৮ এপ্রিল ২০২৫)
উপরের ২ নম্বর মানচিত্রটি ১১ এপ্রিল ২০২৫, রাত ১২ টা (বাংলাদেশ সময়) পর্যন্ত সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ ও শক্তি সম্পর্কে পূর্বাভাস দেখাচ্ছে।
🔍 উপরের ২ নম্বর মানচিত্রে যা যা দেখা যাচ্ছে:
১. রঙিন রেখা ও বৃত্ত (পথ নির্দেশনা):
-----> হলুদ, সবুজ ও নীল রঙের রেখাগুলো ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ দেখাচ্ছে।
-----> প্রতিটি বৃত্ত দেখায় ঘূর্ণিঝড় নির্দিষ্ট সময়ে কোথায় থাকতে পারে।
-----> রেখাগুলোর ছড়িয়ে পড়া দেখাচ্ছে পূর্বাভাসে কতটা অনিশ্চয়তা আছে।
২. ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি (রঙের মাধ্যমে দেখানো):
নিচে ছবিতে যে রঙের স্কেল আছে তার বিভিন্ন রঙ সাম্ভব্য লঘুচাপ/ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি (হাওয়ার গতি ও শ্রেনীবিভাগ বা ক্যাটাগরি নির্দেশ করতেছে) বুঝিয়ে দিচ্ছে:
বিভিন্ন রঙ এর অর্থ
🟦 নীল ট্রপিক্যাল স্টর্ম (দুর্বল ঝড়)
🟩 সবুজ ক্যাটাগরি ১ (মৃদু ঝড়)
🟨 হলুদ ক্যাটাগরি ২ (মাঝারি ঝড়)
🟧 কমলা ক্যাটাগরি ৩ (তীব্র ঝড়)
🟥 লাল ক্যাটাগরি ৪ (অত্যন্ত শক্তিশালী)
🟪 গোলাপি ক্যাটাগরি ৫ (সর্বোচ্চ শক্তিশালী)
মানচিত্রে অধিকাংশ রেখা সবুজ ও হলুদ রঙের, অর্থাৎ ঝড়টি মাঝারি শক্তিশালী (ক্যাটাগরি ১–২) হতে পারে। সাম্ভব্য লঘুচাপটি উপকূল অতিক্রমের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠার আশংকা করা যাচ্ছে।
৩. ভূমিতে আঘাতের সম্ভাব্য এলাকা:
বেশিরভাগ পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের চট্রগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে দক্ষিন চট্রগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবাণ জেলা ও মায়ায়ামনারের রাখাইন রাজ্যের উপর দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করার আশংকা করা যাচ্ছে আগামী ১০ ই এপ্রিল বৃহপতিবার ও ১১ ই এপ্রিল শুক্রবার।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের জন্য বৃষ্টিপাত সতর্কতা:
কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের উপর দিয়ে সম্ভব্য লঘুচাপটির বৃষ্টিপাতের মূল অংশ অতিক্রম করার আশংকা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার উপরে আগামী ১০ ই এপ্রিল বৃহপতিবার ও ১১ ই এপ্রিল শুক্রবার ১০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের আশংকা করা যাচ্ছে। সম্ভব্য লঘুচাপটি উপকূল অতিক্রমের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠার আশংকা করা যাচ্ছে।
ছবি: সম্ভব্য লঘু চাপের কারণে সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে (১১ ই এপ্রিল রাত ১২ টা পর্যন্ত)
কক্সবাজার জেলার লবণ চাষিদের জন্য পরামর্শ:
কক্সবাজার জেলার লবণ চাষিদের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে যে জমিতে যদি তুলে ফেলার মতো কোন লবণ থাকে তবে তা আগামীকাল বুধবার, ৯ ই এপ্রিলের মধ্যে তুলে ফেলা কিংবা জড়ো করে রাখলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকবে।
সমুদ্র-গামী জেলেদের জন্য জন্য পরামর্শ:
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার সমুদ্র-গামী জেলেদের জন্য জন্য পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে যে আগামী ১০ ই এপ্রিল বৃহপতিবার ও ১১ ই এপ্রিল শুক্রবার কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার উপকূলে সমুদ্র খুবই উত্তাল থাকার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। ফলে এই দুই জেলার সমুদ্রে অবস্থানরত মাছ ধরা ট্রলারগুলোকে দ্রুত উপকূলে ফেরার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে। আগামী ১০ ই এপ্রিল বৃহপতিবার ও ১১ ই এপ্রিল শুক্রবার কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী সমুদ্রে মাছ ধরা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।