একটি বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস ওয়েবসাইট যা বাংলা ভাষায় আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে একাধিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ ও রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস

তাপপ্রবাহ

Blog Image
Email : 660k 12k

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপ এর কারণে দেশব্যাপী বৃষ্টি শুরু হয়েছে ৮ ই জুন থেকে যা ১১ ই জনু পর্যন্ত চালার সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশব্যাপী চলা তাপপ্রবাহের মধ্যে হঠাৎ করে দেশব্যাপী বৃষ্টি শুরু হলও কেন?

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেই সাথে মৌসুমি বায়ু চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে পৌঁছে গেছে। লঘুচাপ ও মৌসুমি বায়ুর মিলিত প্রভাবের কারণে গতকাল ৮ ই জুন থেকে দেশব্যাপী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অনেকেই বলতেছে হঠাৎ করে এই বৃষ্টি শুরু হয়েছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো এই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিতে পারে নাই, যা প্রকৃত পক্ষে সত্য না। আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো মে মাসের ৩১ তারিখেই গতকাল থেকে চালু হওয়া বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিলাম।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। ফলে এটি লঘুচাপ কিংবা আরও দুর্বল হয়ে সাধারণ বৃষ্টিপাত আকারে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপর দিয়েই স্থল ভাগে প্রবেশ করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে আর আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে।

আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে গত ৩১ শে মে, ২০২৩ তারিখে পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছিলাম যে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ২ টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে জুন মাসের ২য় সপ্তাহে। এই দুই সাগরের মধ্যে প্রথম যে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হবে তার নাম হবে বিপর্যয় (Biparjoy) ও দ্বিতীয় যে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হবে তার নাম হবে তেজ। বিপর্যয় নামটি বাংলাদেশের দেওয়া ও তেজ নামটি ভারতের দেওয়া।

এর পরে জুন মাসের ২ তারিখে আবারও পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছিলাম যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেলের (ECMWF Integrated Forecasting System) ও আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের (Global Forecast System) পূর্বাভাস অনুসারে আরব সগরের ঝড়টি প্রথমে সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। অধিকন্তু, এই ঝড়টি অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে (প্রকৃত পক্ষে এই ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হয়েছে ও পূর্বাভাস রয়েছে যে এটি অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে)। জুন মাসের ২ তারিখের পুর্বাভসে আরও উল্লেখ করেছিলাম যে যেহেতু আরব সাগরের ঝড়টি প্রথমে সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল ও সেই সাথে শক্তিশালী ঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল তাই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে বঙ্গোপসাগরে (৬ থেকে ৯ জুনের মধ্যে) একটি লঘু চাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবন রয়েছে যা জুন মাসের ১১ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে নিম্নচাপ হিসাবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপকুলে আঘাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

প্রমাণ পাওয়া গেছে কি গতকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি সম্বন্ধে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ১০ দিন পূর্বেই পূর্বাভাষ দিয়েছে?

 

আপনি প্রশ্ন করতে পারেন যে এর মধ্যে আমি দেশব্যাপী তাপ-প্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছিলাম কেন? কিংবা তাপ-প্রবাহের পূর্বাভাস থেকে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলও কেন?

তাপ-প্রবাহ কেটে গিয়ে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণও হলও আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়ার লঘু চাপ। জুন মাসের ২ ??ারিখের পূর্বাভাস অনুসারে আরব সাগরে সৃষ্টি-হওয়া ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আজ ৯ ই জুন ভারতের গুজরাট রাজ্যের উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করিতেছিল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো। প্রকৃত পক্ষে আজ ৯ ই জুন ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আরব সাগরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করছে। আজকের পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় জুন মাসের ১৪ তারিখে পাকিস্তান ও ইরান সীমান্তবর্তী স্থানের উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের স্হাল ভাগে আঘাতের সম্ভব্য স্থান উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার সরে গেছে।

জুন মাসের ২ তারিখের পূর্বাভাস অনুসারে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপকুলে আঘাতের সম্ভাবনা ছিলও। ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার কারণে এর প্রভাব পড়ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটির উপরে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি স্থল ভাগে আঘাতের স্থান চট্টগ্রাম-মায়ানমার উপকূলের পরিবর্তে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলের উপরে সরে গেছে। যে কারণে ৮ই জুন থেকে বরিশাল বিভাগের ভোলা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা জেলার উপরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। আজ ৯ ই জুন ঢাকা শহরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে সকাল ১০ টার পর থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত। এছাড়া গত ৩৬ ঘন্টা প্রায় দেশের সকল জেলায় কিছু-না-কিছু পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে।

ছবি: মৌসুমি বায়ু প্রবাহের অবস্হানের মানচিত্র (ছবি কৃতজ্ঞতা: ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর)

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া এই লঘুচাপের প্রভাবে দেশব্যাপী বৃষ্টি অব্যাহত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে ১১ ই জুন পর্যন্ত। এর পরে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশব্যাপী বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ২৫ শে জুন পর্যন্ত। জুন মাসের ১২ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে।

Related Post