বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ ও আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় "তেজ" সৃষ্টির হয়েছে (আপডেট: ৪, অক্টোবর ২১, ২০২৩)
আজ ২১ ই অক্টোবর আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় "তেজ" সৃষ্টির হয়েছে। আজ একই দিনে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টির হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি-হওয়া এই নিম্নচাপটি শক্তি সঞ্চয় করে আগামীকাল রবিবারের মধ্যে গভীর নিম্ন চাপে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া এই গভীর নিম্নচাপটি যদি ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অর্জন করে তবে নাম হবে "হামুন"। হামুন নামটি ইরানের দেওয়া।
ছবি: আজ ২১ শে অক্টোবর দক্ষিন-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো হতে প্রাপ্ত পূর্বাভাস অনুসারে বঙ্গোপসাগরে সৃস্টিহওয়া নিম্নচাপটি আগামীকাল পর্যন্ত ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ভিশাখাপত্তম সমুদ্র বন্দরের দিকে (উত্তর-পশ্চিমে) অগ্রসর হবে। আগামী সোমবার থেকে গভীর নিম্নচাপটি ওড়িশা রাজ্যের উপকূল ঘেঁষে পুরোপুরি উত্তর-পূর্ব দিকে বাংলাদেশের বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল।
৭০ থেকে ৮০% নিশ্চয়তা সহকারে পূর্বাভাস করা যায় যে গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করতে যাচ্ছে সরাসরি।
ছবি বর্ণনা: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হপ্রাতে প্ত ঘূর্ণিঝড় মোখার ৫১ টি সম্ভব্য যাত্রাপথ ও বাতাসের গতিবেগের চিত্র। এই চিতটিকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এনসেম্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Ensemble weather forecast) বলা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে ২০২২ সালে ২৪ শে অক্টোবর বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলের উপর দিয়ে স্হল ভাগ অতিক্রম করেছিল ঘূর্ণিঝড় সিতরাং। এই সপ্তাহের গভীর নিম্নচাপটি (যা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার কিছু সম্ভাবনা রয়েছে) প্রায় একই সময়ে ও কাছাকাছি স্থানের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করতে যাচ্ছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেলের (ECMWF Integrated Forecasting System) অনুসারে আগামী ২৫ শে অক্টোবর রাত ১২ টার পর থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে নিম্নচাপ আকারে।
আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের (Global Forecast System) পূর্বাভাস অনুসারে আগামী ২৫ শে অক্টোবর মধ্য রাতের পরে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলের উপর দিয়ে লঘুচাপ স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের উপকূলে আঘাতের সম্ভাব্য সময়: ২৫ শে অক্টোবর মধ্য রাতের পর থেকে ২৬ শে অক্টোবর দুপুর ১২ টার মধ্যে।
বাতাসের সম্ভব্য গড় গতিবেগ: ঘন্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার
বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ (দমকা হাওয়া): ঘন্টা ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার
জলোচ্ছ্বাসের সম্ভব্য উচ্চতা: স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুট বেশি
বৃষ্টিপাতের সম্ভব্য পরিমাণ (২৩ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত): বরিশাল ও খুলনা ২০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার; চট্টগ্রাম, ও সিলেট ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার; ঢাকা, ময়মনিসংহ ১৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটার; রাজশাহী, রংপুর বিভাগ ৫০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার।
ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেলের (ECMWF Integrated Forecasting System) পূর্বাভাস অনুসারে সাম্ভব্য লঘুচাপ টির কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের উপরে সাম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান।
সর্বোচ্চ পরিমাণের বৃষ্টিপাতের ঝুঁকিপূর্ণ জেলা: সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা জেলা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ২৯ শে অক্টোবর পূর্ণিমা রাত। অর্থাৎ, গভীর নিম্নচাপটি বা সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ণিমা রাতের মাত্র ৩ দিন পূর্বে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে নিম্নচাপটি বা সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির কারণে বাতাসের গতিবেগ অপেক্ষাকৃত কম থাকলেও জলোচ্ছাজের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুট বেশি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
ছবি: ঘুর্নিঝড় তেজ এর কারণে সৃষ্ট মেঘের চিত্র। (ছবি সুত্র: আমেরিকার নৌবাহিনী কতৃপ পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার)
ছবি: ঘুর্নিঝড় তেজ এর সাম্ভব্য যাত্রাপথ। (ছবি সুত্র: আমেরিকার নৌবাহিনী কতৃপ পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার)