আবহাওয়া পূর্বাভাষ ও গবেষণার সাথে সম্পর্কিত যন্ত্রপাতি পরিচিতি: আরগো ফ্লোট (Argo floats)
সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক পরিমাপ করা হয় আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক একটি যন্ত্রের মধ্যমে। আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক যন্ত্রটি দ্বারা সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা, ও পূর্বাভাষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামুদ্রিক জাহাজ চলাচলেও এই তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একই ভাবে এই তথ্য বিশ্লেষণ করে সমুদ্রের বিভিন্ন স্থানে মৎস্য সম্পদের জন্য অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেষ সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।
আরগো ফ্লোট (Argo floats) এর মাধ্যমে সংগৃহীত সমুদ্রের পানির বিভিন্ন ভৌত তথ্য (পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক ইত্যাদি) প্রথমে কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহগুলোর গ্রাহক যন্ত্রে পাঠানো হয়। কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহগুলো যখন ভূমির উপরিভাগে স্থাপিত কোন স্থানের উপর দিয়ে অতিক্রম করে তখন সেই তথ্যগুলো ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়। যেমন সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করার কাজ শুরু হয়েছে যে স্টেশনে চিন সরকার পরিচালিত সমুদ্র সম্পর্কিত কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য গ্রহণ করা হবে। অনেক কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ রয়েছে যা দিনে একবার থেকে ১৫ দিনে মাত্র ১ বার পৃথিবীর একই স্থানের উপর দিয়ে অতিক্রম করে। এই কারণে একই কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয় যাতে করে সেই কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ দ্বারা সংগৃহীত তথ্য দ্রুত ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রহণ করে সেই তথ্যগুলো আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন মডেলে ব্যবহার করে মানুষের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
প্রত্যেকটি আরগো ফ্লোট (Argo floats) এ একটি করে জিপিএস থাকে যার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় আরগো ফ্লোট (Argo floats) টি কোন দিক থেকে কোন দিকে যাচ্ছে ও সমুদ্রের কোন স্থানের পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক পরিমাপ করতেছে। আমরা মোবাইল দিয়ে দূরবর্তী কাউকে ফোন দিলে প্রথমে সিগনালটি আমাদের নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ারে যায়। এর পরে আমাদের নিকটবর্তী টাওয়ার থেকে যে ব্যক্তিকে ফোন করছি তার স্থানের মোবাইল টাওয়ারে যায় ও সর্বশেষে ঐ টাওয়ার থেকে সিগনালটো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে যায়। উপরে বর্ণিত আরগো ফ্লোট (Argo floats) যন্ত্রটিও প্রায় একই ভাবে সিগনাল আদান-প্রদান করে। তবে মোবাইলের সাথে একটি পার্থক্য আছে। মোবাইল দিয়ে তথ্য পাঠানো ও গ্রহণ করা যায়; পক্ষান্তরে আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক যন্ত্রটি শুধুমাত্র তথ্য প্রেরণ করতে পারে (তথ্য গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় না)।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রে প্রায় ৪ হাজার আরগো ফ্লোট (Argo floats) সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক পরিমাপ করতেছে। এই ৪০০০ আরগো ফ্লোট (Argo floats) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমুদ্রে ছেড়েছে। আমাদের পাশের দেশ ভারত ১২৪ টি আরগো ফ্লোট (Argo floats) ছেড়েছে সমুদ্রে। অবাক হই নাই যে আমাদের বাংলাদেশের নিজের এত বড় সমুদ্র এলাকা থাকার পরেও ১ টিও আরগো ফ্লোট (Argo floats) যন্ত্র ছাড়ে নাই সমুদ্রে।
নিচে সংযুক্ত চিত্রে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের কোন সমুদ্র এলাকায় কি পরিমাণ আরগো ফ্লোট (Argo floats) বিচরণ করে তথ্য আহরণ করছে। নিচে সংযুক্ত চিত্রে বিস্তারিত ভাবে দেখানো হয়েছে আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক যন্ত্রটি কিভাবে কাজ করে। একই সাথে নিম্নোক্ত ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাবে বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন আরগো ফ্লোট (Argo floats) এর নিয়ার রিয়েল টাইম অবস্থান।
https://incois.gov.in/portal/OON.jsp
ছবি কৃতজ্ঞতা: NOAA Office of Oceanic and Atmospheric Research