একটি বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস ওয়েবসাইট যা বাংলা ভাষায় আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে একাধিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ ও রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

বিশ্বের বজ্রপাতের মানচিত্র: কোথায় সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ চমকে ওঠে?

Blog Image
Email : 181k 12k

বজ্রপাত সম্পর্কীত নিচের প্রশ্নের উত্তরগুলো আপনি জানেন কি?


✅ বিশ্বের কোথায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়? 

✅ নিরক্ষীয় অঞ্চলে কেন বজ্রপাত বেশি হয়?

✅ মহাসাগর না স্থলভাগ—কোথায় বেশি বজ্রপাত?

✅ আফ্রিকার কঙ্গো কেন পৃথিবীর বজ্রপাতের রাজধানী?


প্রতিদিন পৃথিবীর কোনো না কোনো জায়গায় বজ্রপাত হচ্ছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, পৃথিবীর কোন অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় আর কোথায় একেবারেই হয় না? নাসার স্যাটেলাইট থেকে সংগৃহীত তথ্য বলছে, বজ্রপাত কখনোই সমানভাবে হয় না—স্থলভাগে মহাসাগরের তুলনায় বেশি, আর নিরক্ষীয় অঞ্চলে মেরু অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি। মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো অঞ্চলকে বলা হচ্ছে বিশ্বের বজ্রপাতের রাজধানী! চলুন দেখে নিই নাসার চোখে বিশ্বের বজ্রপাতের মানচিত্র এবং এর পেছনের বিজ্ঞান।




ছবি বর্ণনা : উপরের মানচিত্রটি নাসার কৃত্রিম উপগ্রহে সংগৃহীত ১৯৯৫–২০০২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বছরে গড়ে কতবার বজ্রপাত হয় তা দেখাচ্ছে। যেখানে গড়ে বছরে ১টির কম বজ্রপাত হয়, সেই স্থানগুলো ধূসর বা হালকা বেগুনি রঙে দেখানো হয়েছে। আর যেসব স্থানে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়, সেগুলো গভীর লাল রঙে চিহ্নিত। 


নাসার স্যাটেলাইট দেখালো নিরক্ষীয় অঞ্চল কেন বজ্রঝড়ের হটস্পট, আর মেরু অঞ্চলে কেন বজ্রপাত নেই



বজ্রপাত – প্রকৃতির এক অনন্য বৈদ্যুতিক প্রদর্শনী


পৃথিবীর আকাশে প্রতিদিন লাখ লাখ বার বজ্রপাত হয়। কিন্তু সব জায়গায় তা সমানভাবে ঘটে না। কোথাও দিনে একাধিকবার বজ্রপাত হয়, আবার কোথাও বছরে একবারও নাও হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে—বিশ্বের কোথায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়? আর কেন কিছু অঞ্চলে বজ্রপাত কম হয়?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দিয়েছে নাসার স্যাটেলাইট মানচিত্র, যা ১৯৯৫ থেকে ২০০২ সালের বজ্রপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। 


মানচিত্র কী বলছে?

নাসার এই বৈশ্বিক মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে—

  • ধূসর/হালকা বেগুনি রঙের অঞ্চলগুলোতে বছরে ১টিরও কম বজ্রপাত হয়।

  • নীল/সবুজ অঞ্চলে বছরে ১–৫টি বজ্রপাত হয়।

  • হলুদ/কমলা রঙের অঞ্চলগুলো মাঝারি বজ্রপাতপ্রবণ।

  • আর গাঢ় লাল রঙে চিহ্নিত অঞ্চলগুলো বজ্রপাতের হটস্পট, যেখানে বছরে ২০টিরও বেশি বজ্রপাত হয় প্রতি বর্গকিলোমিটারে।

ফলাফল কী দেখালো?
স্থলভাগে মহাসাগরের তুলনায় অনেক বেশি বজ্রপাত হয়।
নিরক্ষীয় অঞ্চলগুলো বজ্রপাতপ্রবণ, আর মেরু অঞ্চলগুলো প্রায় বজ্রপাতমুক্ত।



কেন স্থলভাগে বেশি বজ্রপাত হয়?

দিনের বেলা সূর্যের আলোতে স্থলভাগ দ্রুত গরম হয়, কিন্তু মহাসাগর ধীরে গরম হয়। ফলে স্থলভাগের গরম বাতাস দ্রুত উপরে উঠে কনভেকশন তৈরি করে, যা থেকে সন্বচারনশীল মেঘ ও বজ্রঝড় সৃষ্টি হয়। এই কারণেই ভূমধ্যসাগরীয় আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন বনাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশি বজ্রপাত হয়।


নিরক্ষীয় অঞ্চল বজ্রপাতের রাজধানী কেন?

নিরক্ষীয় অঞ্চল বা ইকুয়েটর (Equatorial regions) পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ এলাকা। এই উষ্ণতা থেকে প্রতিদিন সঞ্চরণশীল মেঘের সৃষ্টি করে (প্রবল কনভেকশন হয়) যা বজ্রঝড় ও বজ্রপাতের জন্য আদর্শ।
🌩 মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো অঞ্চলকে বিশ্বের বজ্রপাতের রাজধানী বলা হয়।
🌩 দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন অঞ্চল ও ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জেও বজ্রপাত খুব বেশি হয়।

অন্যদিকে, উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে (Polar regions) বজ্রপাত নেই বললেই চলে, কারণ সেখানে বাতাস ঠান্ডা ও স্থিতিশীল, ফলে বজ্রঝড় তৈরি হয় না।


এই তথ্য এসেছে কোথা থেকে?

এই মানচিত্রের তথ্য এসেছে নাসার দুই স্যাটেলাইট সেন্সর থেকে—

  • লাইটনিং ইমেজিং সেন্সর (Lightning Imaging Sensor – LIS)


দুই স্যাটেলাইট সেন্সর ডিজাইন করেছে নাসার মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের গ্লোবাল হাইড্রোলজি অ্যান্ড ক্লাইমেট সেন্টার, যারা বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এই তথ্য শেয়ার করে। 


কেন এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ?

বজ্রপাত কেবল একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়, এটি মানুষের জীবন, সম্পদ ও অবকাঠামোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বজ্রপাতের ধরন জানলে—

    1.  বজ্রঝড়প্রবণ অঞ্চলগুলোতে আগাম সতর্কতা জোরদার করা যায়
    2. কৃষক ও জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়
    3. বনায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈদ্যুতিক সিস্টেমের ওপর বজ্রপাতের প্রভাব বোঝা সহজ হয়

উপসংহার

বজ্রপাত মূলত সূর্যের তাপ, কনভেকশন এবং আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে। তাই যেখানে ভূমি বেশি গরম হয় ও আর্দ্রতা থাকে, সেখানেই বজ্রঝড় বেশি হয়। আর এ কারণেই নিরক্ষীয় অঞ্চল বজ্রপাতের হটস্পট।

নাসার এই মানচিত্র আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে—প্রকৃতি কতটা বৈচিত্র্যময় এবং এই বৈদ্যুতিক শক্তি পৃথিবীর আবহাওয়ার সাথে কতটা গভীরভাবে যুক্ত।

Related Post