একটি বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস ওয়েবসাইট যা বাংলা ভাষায় আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে একাধিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ ও রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

কাল বৈশাখী

অক্টোবর মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে দক্??িণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা

Blog Image
Email : 78980k 12k

অক্টোবর মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা

বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য একাধিক আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল হতে প্রাপ্ত ১০ থেকে ১৫ দিনের আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে।

 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া কোন লঘু চাপ কিংবা নিম্নচাপ পুর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না তা আবহাওয়া সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন ভারতীয় উপমহাদেশে জেট স্টিমের গতিপথ ও আবহাওয়ার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশেষ করে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উচ্চতায় বায়ুপ্রবাহের দিক ও মান, বায়ুচাপ, বায়ু শিয়ার, সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য ২৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পানির তাপমাত্রা, সমুদ্রে জমা হয়ে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় তাপীয় শক্তির পরিমাণ।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের বৈশিষ্ট্য ও কিছু পরিসংখ্যান :

 

বঙ্গোপসাগরে ২ টি ঘূর্ণিঝড় মৌসুম: বর্ষাকালের পূর্বে এপ্রিল, মে, ও জুন মাসে ও অন্য মৌসুমটি বর্ষাকালের পরে অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি-হওয়া ঘূর্ণিঝড় এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় নভেম্বর মাসে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় অক্টোবর মাসে। বঙ্গোপসাগরে সবচেয়ে শক্তিশালি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় নভেম্বর ও মে মাসে।

বর্ষাকালের পরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে অনুকূল সময় হলও অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস। অক্টোবর মাসের প্রথম ২ সপ্তাহে ও ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের পরে বঙ্গোপসাগরে কোন নিম্নচাপ সৃষ্টি হলেও তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম থাকে। অক্টোবর মাসের প্রথম ২ সপ্তাহে লঘু চাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টি হলেও বেশিভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো পুর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় কম কারণ ঐ সময় শক্তিশালি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার মতো সকল অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে না বঙ্গোপসাগর ও ভারতীয় উপমহাদেশের উপর। তবে নিম্নচাপের পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করে দেওয়া যায় না যেহেতু ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়া অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

অক্টোবর মাসের প্রথম ২ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে কোন নিম্নচাপ সৃষ্টি হলেও তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম থাকার অন্যতম কারণ হলও বর্ষা মৌসুম শেষ না হয়ে যাওয়া। বর্ষা কালের মৌসুমি বায়ু যখন ভারতীয় উপমহাদেশের উপরে অবস্থা করে তখন বায়ুমণ্ডলে বায়ু শিয়ারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। বায়ু শিয়ার হলও ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উ-লম্ব উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে-সাথে বায়ু প্রবাহের দিক (বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উচ্চতায় বায়ু ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়) ও বায়ু-প্রবাহের মানের (ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে-সাথে বায়ু প্রবাহের মান বৃদ্ধি পায়) পরিবর্তন।

২০২২ সালের অক্টোবর মাসের ১৮ থেকে ২৪ তারিখ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সৃষ্টি হয়েছিল যা বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলের উপর দিয়ে বাংলাদেশের উপর দিয়ে স্থল ভাগ অতিক্রম করে ভারতের মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যের উপর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করে।

পুরো বছরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে। ১৯৭০ সালে ভোলা ঘূর্ণিঝড় (বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল কোন ঘূর্ণিঝড় এর কারণে) হয়েছিল নভেম্বর মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ ও ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর (প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ মারা যায় বেসরকারি হিসাবে) হয়েছিল নভেম্বর মাসের ১১ থেকে ১৬ তারিখের মধ্যে। ডিসেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহের পরে বঙ্গোপসাগরে কোন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলেও সেই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম থাকে। কারণ ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা অনেক কম থাকে যে তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় এর জন্য সহায়ক হবে না।

ছবি বর্ণনা: ছবি বর্ণনা: উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাস ভিত্তিক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সংখ্যা


বিশেষ দ্রষ্টব্য: গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ,

অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘু/নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে একাধিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। তবে ২৩ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মডেলগুলোর পূর্বাভাসের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে সম্ভব্য এই লঘু/নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না? স্থল ভাগে আঘাত করার স্থান নিয়েও মডেলগুলো ভিন্ন-ভিন্ন স্থান নির্দেশ করতেছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের মূলধারার ২/১ টি গণমাধ্যম আবহাওয়া পূর্বাভাসের বিভিন্ন আ্যাপ থেকে পূর্বাভাস দেখে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে ও স্থাল ভাগে আঘাতের স্থান উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করেছে। গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, সংবাদ কাটতির জন্য মুখরোচক সংবাদ শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন।

Related Post