একটি বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস ওয়েবসাইট যা বাংলা ভাষায় আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে একাধিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ ও রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

ঘূর্ণিঝড়

তাপ-প্রবাহ কি? আবহাওয়া-বিদরা কখন কোন স্থানে তাপ-প্রবাহ অবস্থা ঘোষণা করে থাকেন?

Blog Image
Email : 4566k 12k
মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: তাপ-প্রবাহ কি? আবহাওয়া-বিদরা কখন কোন স্থানে তাপ-প্রবাহ অবস্থা ঘোষণা করে থাকেন?
আগামী ১০ দিন () বাংলাদেশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি মানের তাপ প্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সাধারণত, কোনো বিস্তৃত এলাকাজুড়ে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি থাকলে মাঝারি এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।
কোন স্থানের উপর তাপ প্রবাহ অবস্থা ঘোষণা করার জন্য কিছু অবশ্যকীয় শর্ত পূরণ করতে হয়। আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় কোন স্থানে তাপপ্রবাহ অবস্থা বিরাজ করবে যদি সেই স্থানের উর্ধা-আকাশে বায়ুর নিম্নচাপ ও ভূ-পৃষ্ঠে বায়ুর উচ্চ-চাপ অবস্থা বিরাজ করে দীর্ঘ সময় ধরে। Heat waves are generally caused by quasi-stationary anticyclonic circulation anomalies or atmospheric blocking।
উপমহাদেশে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞাকেই সাধারণত মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুসারে সমতল ভূমিতে অবস্থিত কোন অঞ্চলের কমপক্ষে ২ টি আবহাওয়া স্টেশনে পর-পর ২ দিন দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি থাকে তবে সেই স্থানের উপর তাপ-প্রবাহ অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
তাপপ্রবাহের অন্য ২ টি সংজ্ঞা হলও কোন স্থানের বছরের ঐ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা (মা মাসের শেষ সপ্তাহের ৩০ বছরের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যদি ৪ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি হয় তখন তাকে তাপ প্রবাহ (Heat Wave) বলা হয়।
কোন স্থানে বছরের ঐ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যদি ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস অপেক্ষা বেশি হয় তখন তাকে তীব্র তাপ প্রবাহ (Severe Heat Wave) বলা হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তাপ প্রবাহের সংজ্ঞায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর তাপ প্রবাহকে Heat Wave ও Severe Heat Wave নামে ২ প্রকারে ভাগ করলেও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর তাপ প্রবাহ কে ৪ ভাগে ভাগ করে থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে দেশের একটি বিশাল এলাকা জুড়ে নিম্নোক্ত অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বিরাজ করতে হবে মাত্র ২/৪ টি জেলায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে উঠলেই তাপ-প্রবাহ ঘোষণা করা যাবে না।
১) মৃদু তাপ প্রবাহ (তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) [স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি]
২) মধ্যম তাপ প্রবাহ (তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) [স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি]
৩) তীব্র তাপ প্রবাহ (তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস) [স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি]
৪) খুবই তীব্র তাপ প্রবাহ (তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস অপেক্ষা বেশি) [স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ডিগ্রী কিংবা সেলসিয়াস বা তা অপেক্ষা বেশি]
তাপ প্রবাহ অবস্থাকে তুলনা করা যায় ঈদের সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মাহ-সড়ক কিংবা ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়কে একই স্থানে গাড়ি স্থবির হয়ে পড়াকে। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে কুমিল্লা পৌছাতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লাগে। কোন দিন যদি ঢাকা থেকে কুমিল্লা পৌছাতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগলে আপনি যেমন সেই যানজটকে মাহা-যানজট বলতে পারবেন না। পত্রিকার পাতায় ঐ সংবাদও প্রকাশিত হবে না। কিন্তু যদি ঢাকা থেকে কুমিল্লা পৌছাতে ১২ থেকে ২০ ঘণ্টা লাগে তবে নির্দ্বিধায় আপনি সেটাকে মাহাজানযট বলতে পারবেন; পত্রিকার পাতায়ও সেই সংবাদ প্রকাশিত হবে। প্রকৃতির ক্ষেত্রেই একি ঘটনা ঘটে মাঝে-মধ্যে।
আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই যে ভারতীয় উপমহাদেশের উপর ঐ ধরনের কোন প্রাকৃতিক যানজট লেগে বায়ুপ্রবাহ স্থবির হয়ে পড়ে নি। ফলে আগামী ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে দেশের বেশিভাগ জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ (তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি হওয়ার) বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। নিচে যোগ করা ছবিতে দেখুন মধ্য ভারতের ব্যাপক পরিমাণে মেঘের সৃষ্টি হয়েছে ও সেই মেঘ বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

Related Post